চোখের লাল ভাব কমানোর কিছু ঘরোয়া উপায়-চোখ লাল হওয়ার কারণ ও প্রতিকার

টুথপেস্ট দিয়ে চোখের নিচের কালো দাগ দূর করুনআজকে আমরা আলোচনা করতে চলেছি "চোখের লাল ভাব কমানোর কিছু ঘোরোয়া উপায়" সম্পর্কে। মানব চোখ একটি ইন্দ্রিয় অঙ্গ যা সংবেদনশীল এবং স্নায়ুতন্ত্রের অংশ। শরীরের এই অঙ্গের গুরুত্ব আমরা সবাই হারে হারে বুঝি। সুতরাং যদি কোনো কারণে চোখে অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় সে ক্ষেত্রে আমরা অনেক পীড়ায় ভোগে থাকি। আমাদের সর্বদা চেষ্টা থাকে শরীরের এই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গটিকে নিরাপদ এবং সুস্থ রাখার। আমরা কোনমতেই চাই না এই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গটির সুস্বাস্থ্য ব্যাহত হোক।
চোখের লাল ভাব কমানোর কিছু ঘরোয়া উপায়
অনেক সময় নানা ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত কারণে দেখা যায় আমাদের চোখ লাল হয়ে গিয়েছে যা মোটেও কোন ইতিবাচক বিষয় নয় বরং এটি অপ্রীতিকর অবস্থা সৃষ্টি করার পাশাপাশি আমাদের চিন্তায় ফেলে দেয়। আজকে নিবন্ধে আমরা চোখের লাল ভাব কমানোর উপায় সম্পর্কে জানব এবং এর পাশাপাশি চোখ লাল হওয়ার কারণ ও প্রতিকার এবং আরো সকল আনুষঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করব।

চোখ লাল হওয়ার কারণ ও প্রতিকার

চোখ লাল হওয়ার অনেক ধরনের কারণ বিদ্যমান রয়েছে । এর মধ্যে কিছু সাধারণ কারণ হলঃ
  • শুষ্ক চোখঃ পর্যাপ্ত পরিমাণে অশ্রু না থাকলে চোখ শুষ্ক হয়ে লাল হয়ে যেতে পারে পারে।
  • অ্যালার্জিঃ ধুলো, পরাগ, পোষা প্রাণীর লোম, কিছু খাবার বা ওষুধের প্রতি অ্যালার্জির কারণে চোখ লাল, চুলকানি এবং জ্বালাপোড়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • সংক্রমণ জনিত কারণঃ ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস বা ছত্রাকের সংক্রমণের ফলে চোখ লাল, ফোলা ভাব দেখা দেওয়া এমনকি চোখে পুঁজ পর্যন্ত হতে পারে।
  • আঘাত জনিত কারণেঃ চোখে ধুলোবালি, ময়লা বা অন্য কোনো বস্তু ঢুকে গেলে বা অসাবধানতাবশত চোখে আঘাত লাগলে চোখ লাল হতে পারে।
  • চোখের ক্লান্তিঃ দীর্ঘক্ষণ কম্পিউটার, টেলিভিশন কিংবা মোবাইল স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকলে, পর্যাপ্ত ঘুম না হলে এমনকি চোখে পর্যাপ্ত বিশ্রাম না দিলে চোখের লালভাব দেখা দেওয়া ও ক্লান্তি হতে পারে।
  • কনটাক্ট লেন্সঃ কনটাক্ট লেন্স ব্যবহারের ফলেও চোখ লাল হতে পারে, বিশেষ করে যদি লেন্সগুলো নিয়মিত পরিষ্কার না করা হয় বা দীর্ঘক্ষণ ধরে পরা হয়। যার জন্য চেষ্টা করতে হবে চোখে পরিধান কৃত লেন্সগুলো যেন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়।
  • অন্যান্য চোখের সমস্যাঃ গ্লুকোমা, ইউভাইটিস, এবং শুষ্ক চোখের সিন্ড্রোমের মতো অন্যান্য চোখের সমস্যার ফলেও চোখ লাল হতে পারে।
চোখ লাল হওয়ার প্রতিকার
চোখ লাল হওয়ার কারণের উপর নির্ভর করে চিকিৎসা করা হয়। যার কারণে আমরা পূর্বেই জেনেছি চোখ লাল হওয়ার কারণ সম্পর্কে। চলুন এখন জেনে নেওয়া যাক চোখ লাল হওয়ার কিছু সাধারণ প্রতিকার সম্পর্কে।
  • শুষ্ক চোখের জন্যঃ কৃত্রিম অশ্রু ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • অ্যালার্জির জন্যঃ অ্যালার্জি ঔষধ, যেমন অ্যান্টিহিস্টামাইন বা কর্টিসোনयुक्त আই ড্রপ ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • সংক্রমণের জন্যঃ অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যান্টিভাইরাল বা অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • আঘাতের জন্যঃ বরফ সেঁক দেওয়া যেতে পারে এবং ব্যথার ঔষধ খাওয়া যেতে পারে।
  • চোখের ক্লান্তির জন্যঃ চোখে নিয়মিত বিশ্রাম দেওয়া উচিত, কম্পিউটার বা মোবাইল স্ক্রিনের দিকে তাকানোর সময় বিরতি নেওয়া উচিত এবং পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে। যতটা সম্ভব কম্পিউটার, টেলিভিশন ল্যাপটপ এবং মোবাইল ফোনের স্ক্রিন টাইম কমিয়ে আনার ব্যবস্থা করতে হবে।
  • কনটাক্ট লেন্সের জন্যঃ নিয়মিত লেন্স পরিষ্কার করা উচিত এবং লেন্স পরার সময় নির্দেশাবলী মেনে চলা উচিত। অপরিচ্ছন্ন লেন্স পড়া থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে।

চোখের লাল কমানোর কিছু ঘরোয়া উপায়

চোখ লাল হওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিলে নিজের বুদ্ধিতে কোন ধরনের ওষুধ কিংবা ড্রপ ব্যবহার না করে সর্বপ্রথম উচিত হবে ঘরোয়া পদ্ধতিতে এই চোখের লাল ভাব জনিত সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা এবং পরবর্তী সময়ে এসে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা। যদিও সাধারণ কারণে চোখের লাল ভাব সময়ের সাথে সাথে ঘরোয়া উপায় অবলম্বনের মাধ্যমে দূর হয়ে যায় কিন্তুএই সমস্যা যদি দীর্ঘস্থায়ী হয় সে ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। চলুন আলোচনা করা যাক চোখের লাল ভাব কমানোর কিছু ঘরোয়া উপায় সম্পর্কেঃ
  • ঠান্ডা পানিতে ভেজানো রুমালঃ ঠান্ডা পানিতে পরিষ্কার রুমাল ভিজিয়ে চোখের উপরে ৫-১০ মিনিট রাখুন।দিনে ৩-৪ বার এইভাবে করতে পারেন করতে পারেন। দেখবেন লালভাব অনেকটাই দূর হয়েছে
  • শসার ব্যবহারঃ শসা চোখের যত্নের জন্য অত্যন্ত কার্যকরী একটি উপাদান। শসা পাতলা টুকরো করে কেটে ১০-১৫ মিনিট ফ্রিজে রাখুন।ঠান্ডা শসার টুকরোগুলো চোখের উপরে রাখুন।১০-১৫ মিনিট রাখার পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এইভাবে আপনি দিনে ৩-৪ বার করতে পারেন। এটি যেমন চোখের লাল ভাব দূর করবে ঠিক তেমনি ভাবেই চোখের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে এবং চোখের নিচে জমে থাকা কালো দাগ দূর করতে অত্যন্ত কার্যকর প্রমাণিত হবে।
  • টি-ব্যাগঃ আপনার বাসায় ব্যবহৃত টি ব্যাগ (কালো চা) ব্যবহার করার পর ঠান্ডা করে চোখের উপরে রাখুন। ১০-১৫ মিনিট রাখার পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।দিনে ২-৩ বার এমনটি করতে পারেন। দেখবেন চোখের লাল ভাব অনেক অংশেই দূর হয়ে গেছে।
  • চোখের ব্যায়ামঃ চোখ বন্ধ করে দ্রুত ঘুরিয়ে নিন।ডানদিকে ১০ বার, বামদিকে ১০ বার।তারপর উপরে ১০ বার, নিচে ১০ বার। সারাদিনে কমপক্ষে ৩-৪ বার এইভাবে অনুশীলন করতে পারেন।
  • পর্যাপ্ত ঘুমঃ প্রতিদিন ৭-৮ ঘন্টা ঘুমোন। অনেক সময় ঘুমের অভাব চোখ লাল হয়ে যাওয়ার মত সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • ধূমপান ও মদ্যপান ত্যাগঃ ধূমপান ও মদ্যপান চোখের জন্য ক্ষতিকর।এসব ত্যাগ করলে চোখ ভালো থাকবে। শুধু চোখ নয় বরং ভালো থাকবে আপনার শরীরের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ ও।
  • স্ক্রিন টাইম কমানোঃ কম্পিউটার, মোবাইল ফোন, টেলিভিশনের স্ক্রিনের দিকে দীর্ঘক্ষণ তাকিয়ে থাকলে চোখ লাল হতে পারে। স্ক্রিন টাইম যতটা সম্ভব এড়িয়ে চোখকে বিশ্রাম দিন।
  • অ্যালার্জি এড়িয়ে চলুনঃ যদি ধুলোবালি, পরাগরেণু, পোষা প্রাণীর লোমের মতো কিছুতে অ্যালার্জি থাকে তবে এসব এড়িয়ে চলুন। চেষ্টা করুন এমন স্থানে থাকার যেখানে ধুলোবালি কম রয়েছে এবং এর পাশাপাশি আন্টি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রয়েছে কারণ এ থেকে অ্যালার্জির সৃষ্টি হয় যার জন্য চোখ লাল হতে পারে।
  • চোখ পরিষ্কার রাখুনঃ প্রতিদিন সকালে ও রাতে হালকা গরম পানি দিয়ে চোখ পরিষ্কার করুন।ময়লা ও ধুলোবালি চোখে জমতে দেবেন না।
  • চোখে হাত দেবেন নাঃ ঘন ঘন চোখে হাত দেওয়া চোখের জন্য ক্ষতিকর।চোখে জীবাণু ঢুকতে পারে। অনেকেই চোখ ঘষে কিংবা ডলাডলি করে চোখের স্বাস্থ্যের জন্য মোটেও ইতিবাচক নয়।

হঠাৎ চোখ লাল হলে করণীয়

আমরা আলোচনা করতে চলেছি হঠাৎ চোখ লাল হলে কিংবা চোখের লাল ভাব দেখা দিলে প্রাথমিক ব্যবস্থায় করনীয় সম্পর্কে।
  • ঠান্ডা সেঁকঃ ঠান্ডা পানিতে ভেজা পরিষ্কার কাপড় দিয়ে চোখের উপর ৫-১০ মিনিট ঠান্ডা সেঁক দিন। এতে চোখের লালভাব ও ফোলাভাব কমবে। দেখবেন খুব অল্প সময়ে আরাম পেয়ে গেছেন।
  • চোখ পরিষ্কার রাখুনঃ হালকা গরম পানি ও নরম কাপড় দিয়ে চোখের পাতা ও চোখের কোণ পরিষ্কার করুন। ময়লা ও ধুলোবালি চোখে জমতে দেবেন না।
  • চোখে হাত দেবেন নাঃ ঘন ঘন চোখে হাত দেওয়া চোখের জন্য ক্ষতিকর। এতে জীবাণু ঢুকতে পারে। চোখ ঘষাঘষি করা কিংবা অহেতুক চোখ ডলা থেকে বিরত থাকুন।
  • ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুনঃ ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল চোখের লালভাব আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। এটি থেকে আপনি যতটা দূরে থাকবেন ততটাই আপনার চোখে এবং শরীরের জন্য ভালো।
  • আর্দ্রতা বজায় রাখুনঃ চোখের আর্দ্রতা বজায় রাখার জন্য নিয়মিত চোখের ড্রপ ব্যবহার করুন।
  • পর্যাপ্ত ঘুমঃ প্রতিদিন ৭-৮ ঘন্টা ঘুমোন। ঘুমের অভাব চোখের লালভাব দেখা দিতে পারে
  • স্ক্রিন টাইম কমিয়ে আনুনঃ কম্পিউটার, মোবাইল ফোন, টেলিভিশনের স্ক্রিনের দিকে দীর্ঘক্ষণ তাকিয়ে থাকলে চোখ লাল হতে পারে। স্ক্রিন টাইম কমিয়ে যতটা সম্ভব চেষ্টা করুন চোখকে বিশ্রাম দেওয়ার।
  • চিকিৎসাঃ উপরে উল্লেখিত পদক্ষেপগুলি গ্রহণের পরেও যদি চোখ লালভাব কম না যায়, তাহলে অবিলম্বে একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করুন। চোখ লাল হওয়ার কারণ অনুসারে একজন বিশেষজ্ঞ চোখের ডাক্তার প্রয়োজনীয় ওষুধ দিতে পারবেন।

চোখ লাল হয়ে ফুলে যাওয়ার কারণ

চোখ লাল হয়ে ফুলে যাওয়ার অনেক কারণ আছে। কিছু সাধারণ কারণ হল নিম্নে আলোচনা করা হলো
  • অ্যালার্জিঃ ধুলোবালি, পরাগরেণু, পোষা প্রাণীর লোম, কিছু খাবার বা ওষুধের প্রতি অ্যালার্জির কারণে চোখ লাল হয়ে ফুলে যেতে পারে। যতটা সম্ভব চেষ্টা করুন এই সকল জিনিস এড়িয়ে চলার।
  • শুষ্ক চোখঃ পর্যাপ্ত অশ্রু না থাকলে চোখ শুষ্ক হতে পারে, যার ফলে চোখ লাল হয়ে ফুলে যেতে পারে।
  • ইনফেকশন জনিত কারণঃ ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস বা ছত্রাকের সংক্রমণের কারণে চোখ লাল হয়ে ফুলে যেতে পারে। এরকম কোন সমস্যা দেখা দিলে সর্বোত্তম উপায় হবে তৎক্ষণাৎ ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা।
  • কনজাংটিভাইটিসঃ একটি সংক্রামক রোগ যা চোখের সাদা অংশকে প্রভাবিত করে। যার ফলে চোখ লাল হয়ে যাওয়া এবং ফুলে যাওয়ার মত সমস্যা দেখা যায়।
  • উবেইটিসঃ এটি চোখের ভেতরের অংশের প্রদাহ। এর ফলে সৃষ্টি হয় চোখ ফুলে যাওয়ার মত সমস্যা।
  • ব্লেফারাইটিসঃ এটি চোখের পাতার প্রদাহ। এই প্রদয়হের কারণে চোখের পাতা ফুলে উঠে এবং চোখ লাল হয়ে যায়।
অন্যান্য কারণ সমূহঃ
  • চোখে জ্বালাপোড়াঃ ধোঁয়া, রাসায়নিক বা ধুলোবালির সংস্পর্শে আসলে চোখে জ্বালাপোড়া হতে পারে, যার ফলে চোখ লাল হয়ে ফুলে যেতে পারে।
  • বিশ্রাম না দেওয়াঃ দীর্ঘক্ষণ কম্পিউটার বা মোবাইল স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকলে বা পর্যাপ্ত ঘুম না হলে চোখ লাল হয়ে ফুলে যেতে পারে। যার কারণে চোখের বিশ্রাম অত্যন্ত জরুরী।
  • ক্লান্তিঃ ক্লান্ত হলে চোখ লাল হয়ে ফুলে যেতে পারে।
  • কিছু ওষুধের সেবনঃ উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ বা অ্যান্টিহিস্টামিনের মতো কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে চোখ লাল হয়ে ফুলে উঠতে পারে।

শিশুর চোখ লাল হওয়ার কারণ

বাচ্চারা অনেক বেশি সংবেদনশীল হয় যার ফলে মধ্যবয়স্কদের তুলনায় তাদের দেহের বিভিন্ন অংশ তুলনামূলক বেশি সংবেদনশীল। চোখের ক্ষেত্রেও ঠিক তাই। বিভিন্ন কারণে হঠাৎ করে শিশুর চোখ লাল হতে দেখা যায়। যার মধ্যে সংক্রমণ জনিত কারণে চোখ লাল হতে পারে অপর পক্ষে সংবেদনশীলতা বেশি হওয়ার কারণে সামান্য আঘাতেও শিশুদের চোখ লাল হয়ে যায়। প্রথমে অবশ্য আপনাকে বুঝে নিতে হবে এটি কি কোনরকম অসাবধানতা কিংবা তাদের দাঁড়াই আঘাতের ফলে চোখ লাল হয়েছে না কোন সংক্রমণজনিত কারণে হয়েছে। ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণজনিত কারণে চোখ লাল হলে সাধারণত কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায় যেগুলো হলঃ
  • চোখে চুলকানি হওয়া
  • চোখ থেকে পানি পড়া
  • চোখে শুষ্ক ভাব দেখা দেওয়া
ব্যাকটেরিয়জনিত সংক্রমণের ভিতরে ভাইরাল ইনফেকশন এবং ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশনের কারণে শিশুদের চোখ লাল হয়ে যায়। সাধারণত অ্যাডিনো ভাইরাস এবং হারপিসের কারণে ভাইরাল ইনফেকশন এর প্রভাব দেখা যায় এবং এর ফলে চোখের মনির ভিতরে লালচে ভাব সৃষ্টি হয় অর্থাৎ চোখের ভিতরে অংশ লাল হয়ে যায়। এ ধরনের সংক্রমণ ভালো না হওয়া অব্দি চোখে লালচে ভাব দূর হয় না এবং এই থেকে শিশুদের অন্যান্য রোগ হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে।অপরদিকে হোমিফিলস কিম্বা স্ট্রেপটোকোকাস নিউমোনিয়ার কারণে শিশুদের ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন দেখা দিয়ে থাকে যার কারণবশত শিশুদের চোখ হলুদ কিংবা লাল হয়ে যায়।

এই সংক্রমণজনিত কারণগুলো ছাড়াও বেশ কিছু কারণে শিশুর চোখ লাল হতে পারে যেমনঃ
  • অসাবধানতাবশত অনেক সময় শিশুর চোখে আঘাত লাগতে পারে। কিংবা শিশুরা নিজের অজান্তেই নিজের চোখে আঘাত দিয়ে বসে যার ফলে তৎক্ষণাৎ চোখ লাল হয়ে যায় এবং চোখ থেকে পানি পড়ে।
  • বারবার চোখ ঘোষার ফলে চোখ লাল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে কিছুক্ষণের ভিতরে এটি নিজে থেকেই ঠিক হয়ে যায়।
  • অপরিষ্কার স্থান কিংবা ধুলোবালি থেকে অবশ্যই আমাদের শিশুদের রক্ষা করতে হবে যদি তারা এর কোন স্থানে খেলাধুলা করে তবে ধুলোবালির কারণে তাদের চোখে এলার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে এবং এর ফলে চোখ লাল হয়ে যেতে পারে। এর পাশাপাশি অবশ্যই কোন প্রোডাক্ট ব্যবহারের পূর্বে এলার্জি সংক্রান্ত সমস্যাগুলোর বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে প্রোডাক্ট ব্যবহার করা উত্তম।
  • কোন ধরনের ছোট পোকামাকড় এর কামড়ানোর ফলেও চোখ লাল হয়ে যেতে পারে। যদিও এটি নিজে থেকেই ঠিক হয়ে যায় তবে অনেক সময় দেখা যায় এটি গুরুতর আকার ধারণ করেছে তাই এটি মোটেও অবহেলার কোন বিষয় নয় এইরকম লক্ষণ প্রকাশ পেলে তৎক্ষণাৎ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
  • শুধু এই ধরনের সমস্যা থেকে রক্ষা করতে সর্বোত্তম উপায় হল যতটা সম্ভব তাদের ধুলোবালি থেকে দূরে রাখা এবং পরিষ্কার স্থানে খেলাধুলার ব্যবস্থা করে দেওয়া। কারণ বেশিরভাগ সময়ই এই ধুলোবালির কারণেই বাচ্চাদের চোখ লাল হওয়ার সমস্যা বেশি দেখা যায়।

চোখ লাল হলে ড্রপের নাম

অসাবধানতা, ধুলোবালি কিংবা কোন কারণে আঘাত লাগার ফলে চোখ যদি লাল হয়ে যায় সেই ক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই তা কিছুক্ষনের ভিতরে ভালো হয়ে যায়। কিন্তু যদি মনে হয় সমস্যা বেশি হচ্ছে তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী একটি ভালো চোখের ড্রপ ব্যবহার করা উচিত যার ফলে এ ধরনের সমস্যা থেকে দ্রুত নিরাময় পাওয়া সম্ভব। চোখ লাল হওয়া অবশ্যই একটি অস্বস্তিকর পরিস্থিতি। যার কারণে দ্রুত এর পরিত্রাণ খোঁজার শ্রেয়। চোখ লাল হলে ব্যবহার করা যায় এমন কিছু ড্রপের নাম হলো
  • Cineraria Maritima - চোখ কোনো কারণবশত লাল হয়ে গেলে এটি এর সমাধানের জন্য অত্যন্ত কার্যকর একটি ড্রপ।
  • Suprahen 10 m.l - এলার্জিজনিত সমস্যা কারণে চোখ লাল হলে আপনি এই ড্রপটি ব্যবহার করতে পারেন।
  • Alcraex Eye Drop - এই ড্রপটি আপনাকে এলার্জিক কনজাঙ্কটি ভাইরাস, ধূলিকণা কিংবা দূষণ অর্থাৎ ধুলোর মতো অন্যান্য কারণগুলো হতে সৃষ্ট চোখ লাল হওয়া এবং চোখের জ্বালাপোড়া জনিত সমস্যা হতে প্রতিরোধ করবে।
  • Clear Eyes (Redness Relief) - চোখের এই ড্রপটি চোখ পরিষ্কারের জন্য এবং লালচে ভাব দূর করার জন্য আপনি চাইলে ব্যবহার করতে পারেন।
যেহেতু চোখ একটি সংবেদনশীল অঙ্গ সেহেতু তো অবশ্যই উল্লেখিত ড্রপগুলো কিংবা যেকোনো ধরনের ড্রপ এবং ঔষধ ব্যবহারের পূর্বে আপনাকে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।

চোখ লাল হওয়ার ঔষধ

চোখ লাল হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ কিংবা ড্রপ ব্যবহার করতে হবে। তবুও এর পাশাপাশি আপনারা চাইলে ঘরোয়া পদ্ধতিতে কিছু পন্থা অবলম্বনের মাধ্যমে এ ধরনের সমস্যা নিরাময় করতে পারেন।
  • প্রথমত অসস্তি অনুভূত হলে অবশ্যই আপনাকে চোখে ঠান্ডা পানির ঝাপটা দেওয়ার পরিবর্তে ঠান্ডা পানি রুমালে ভিজিয়ে চোখের ওপর পট্টি দিয়ে রাখুন।
  • চোখ লাল হলে চেষ্টা করুন যতটা সম্ভব কম্পিউটার, টেলিভিশন, কিংবা মোবাইল স্ক্রিন এড়ানোর। এটি আপনার চোখের ব্যথা আরো বেশি বাড়িয়ে দিতে পারে।
  • যেসব খাবার এলার্জিক এবং এর ফলের চোখে লাল হওয়া আরও বেড়ে যেতে পারে চেষ্টা করুন সেই সকল খাবার এড়িয়ে চলার।
  • যতটা সম্ভব নিজেকে এবং নিজের বাসস্থান কে পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করুন। কনজাঙ্কটিভাইটিস প্রতিরোধ করার এটি সব থেকে উত্তম উপায়।
  • ধুলোবালি হতে নিজেকে যতটা সম্ভব দূরে রাখুন প্রয়োজনে সানগ্লাসের ব্যবহার করুন।
  • দীর্ঘক্ষণ গোসল করা থেকে বিরত থাকুন।
  • চোখে লালচে এবং ফোলা ভাব কমাতে আপনি চাইলে গোলাপ জলের ব্যবহার করতে পারেন।
  • শসা চোখের যত্নে অত্যন্ত কার্যকরী। চোখ লাল ভাব কমোতে এবং চোখের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে আপনি চাইলে ব্যবহার করতে পারেন।
  • চোখের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের প্রসাধনী সামগ্রী যেমন কাজল, মাশকরা,আইস্যাডো,ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই আপনাকে সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে। যেহেতু এই সকল পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করা হয়ে থাকে সেহেতু চোখ সাজানোর জন্য দীর্ঘ সময় অব্দি এগুলো ব্যবহারের ফলে চোখ লাল হতে পারে।

সতর্কবার্তা

  • যদি দীর্ঘদিন ধরে চোখ লাল ভাব থেকে যায় তাহলে অবশ্যই আপনাকে একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
  • যদি চোখ লাল হয় দীর্ঘস্থায়ী এবং ঘন ঘন হয় তাহলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানের মাধ্যমে আপনাকে পরবর্তী চিকিৎসা ভাবে যেতে হবে।
  • যদি চোখ লাল হওয়ার সাথে অন্যান্য লক্ষণ পরিলক্ষিত হয় যেমন চোখে ঝাপসা দেখা, চোখ ব্যথা করা, আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি হওয়া, চোখ ফোলা, তাহলে অবশ্যই এই লক্ষণ গুলো নিয়ে বসে না থেকে আপনাকে একজন সচেতন মানুষের মতো দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
  • চোখের লাল হওয়া এর সঠিক কারণ শনাক্তকরণের মাধ্যমে শুধুমাত্র একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের প্রয়োজনীয় ঔষধ দিতে পারবেন।
  • যদি মনে হয় চোখ সংক্রমণজনিত কারণে লাল হয়েছে তাহলে অবশ্যই ঘরোয়া উপায় অবলম্বনের পূর্বে আপনার উচিত ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা।

আমাদের শেষ কথা

চোখ আমাদের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ তা আমরা সকলেই জানি এবং এটি চাইলে বিশ্লেষণ করা সম্ভব নয়। সুতরাং এর যথার্থ যত্ন নেওয়া আমাদের সার্বিক সুস্থতার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। "চোখ লাল কমানোর কিছু ঘোরোয়া উপায়" সম্পর্কিত আমাদের আজকের নিবন্ধে আমরা চেষ্টা করেছি আপনাদের এই বিষয়ে যথার্থ তথ্য প্রদান করার এবং চোখের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার বিষয় সচেতন করার। তবে যেমনটা আমরা পূর্বেও বলেছি যে কোন পদক্ষেপ নেওয়ার পূর্বে সর্বপ্রথম আপনাকে শারীরিক অবস্থা বিবেচনার মাধ্যমে ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়ে পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। 

আশা করি উপরিক্ত প্রবন্ধটি আপনাদের উপকারে আসবে এবং আপনারা সচেতন থাকবেন চোখের মতো গুরুত্বপূর্ণ এবং সংবেদনশীল অঙ্গের যত্নের বিষয়। যদি কোন কারনে চোখের কোন ধরনের সমস্যা দেখা যায় তাহলে অবশ্যই তা নিয়ে বসে না থেকে দ্রুত নিরাময়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করাই হবে একজন বুদ্ধিমান মানুষের কাজআপনাদের গুরুত্বপূর্ণ সময় ব্যয় করে আমাদের আজকের প্রবন্ধটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ সকলকেই।






এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ইজি গ্রাব ওয়েব এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url