মানসিক দুশ্চিন্তা দূর করার উপায় কি? - নিজেকে রাখুন দুশ্চিন্তা মুক্ত

মানসিক দুশ্চিন্তা কি?

মানসিক দুশ্চিন্তা বর্তমান সময়ে এসে গুরুত্ব না দেওয়া সবথেকে ভয়ঙ্কর মানসিক অবস্থা গুলোর ভেতর একটি। মানুষিক দুশ্চিন্তা হলো সেই অনুভূতি যা একজন মানুষ কোন বিষয়ে চিন্তিত বা ভীত হলে অনুভব করে। এটি ভয় বা আতংকের একটি স্বাভাবিক ও মানবিক অনুভূতি। জীবনে চলার পথে কিছুটা উদ্বিগ্ন কিংবা চিন্তিত থাকা স্বাভাবিক কিন্তু এই ভাবনায় যখন স্বাভাবিকতার সীমা অতিক্রম করে ফেলে যা চরম দুর্ভাবনা আর অতিরিক্ত উদ্বেগ কিংবা চিন্তার রূপ নেয় তখন পরিস্থিতি হয়ে দাঁড়ায় ভীতিকর। আরে ভীতিকর পরিস্থিতিকেই আমরা দুশ্চিন্তা বলে থাকি। এটি সাধারণত একটি আবেগ যা আমাদের শরীরের অভ্যন্তরীণ অশান্তির বহিঃপ্রকাশ। 

কোন বিষয়ে দুশ্চিন্তা যখন স্বাভাবিকতার মাত্রা অতিক্রম করে তখন তা ব্যক্তির দৈনিন্দন জীবন কিংবা দক্ষতাকে অনেক বেশি হারে বাধাগ্রস্ত করে এবং তা রোগের পর্যায়ে চলে যায়। যখন কোন ঘটনা কিংবা সিচুয়েশনের কথা ভাবলে আপনার ভয় করে, প্যানিক হয়, হাত-পা ঘামে ও কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে যায় এবং সেগুলো যদি আপনি নিয়মিত ভাবতেই থাকেন আর এর ফলে যদি আপনার প্রতিদিনের কাজ, দৈনিন্দন জীবন, কিংবা প্রোডাক্টিভিটি বাধাগ্রস্ত হয় তবে সেক্ষেত্রে বুঝে নিতে হবে যে আপনি দুশ্চিন্তা কিংবা অ্যাংজাইটিতে ভুগছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এর সমীক্ষা মতে তাদের শেষ রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১৯ সালে প্রতি আট জনের ভেতর একজন এই ধরনের মানসিক অবস্থা শিকার। যা ২০২০ সালের কোভিড-১৯ সমস্যার কারণে আরও বেশি বেড়ে গিয়েছে।

২০২৩ সালের গবেষণার প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশের প্রায় অর্ধ শতাংশ মানুষই মানসিক দুশ্চিন্তায় ভুগছেন। এ সারিতে যে শুধু প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের রয়েছেন তা কিন্তু নয় বরং আমাদের দেশের স্কুলগামী কিশোর-কিশোরীদের ৭৩.৫% এর মাঝেই এই ধরনের মানসিক অবস্থার লক্ষণ দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশের আরো একটি গবেষণার দিকে লক্ষ্য করলে আপনি জেনে অবাক হবেন যে সেই গবেষণার মাধ্যমে ২০০০ মানুষের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয় এবং তাদের সাথে কথা বলার পর জানা যায় এদের প্রতি ১০০ জনের ভিতর ৫ জনই আত্মহত্যা করার চিন্তা করে। এই ধরনের পরিস্থিতি অনেক ভীতিকর। তাই কোনভাবেই মানসিক স্বাস্থ্যকে অবহেলা করার কিছু নেই। বরং কেউ দুশ্চিন্তার মত মানসিক অবস্থা শিকার হলে অবশ্যই তাকে সে বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।

মানসিক দুশ্চিন্তা দূর করার উপায়

যেহেতু দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এবং আমাদের স্বাভাবিক জীবন যাত্রার ক্ষেত্রে এটি একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায় সেক্ষেত্রে অবশ্যই আমাদের এ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার ব্যবস্থা খুঁজে নিতে হবে। তা না হলে এটি ধীরে ধীরে আমাদের শরীরকে গ্রাস করে নিবে এবং স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা অনেক কষ্টসাধ্য হবে। চলুন জেনে নেই দুশ্চিন্তা দূর করার কিছু কৌশল সম্পর্কে যার মাধ্যমে আপনি এই বিপদজনক মানসিক অবস্থা থেকে রক্ষা পেতে পারবেন।

মানসিক দুশ্চিন্তা দূর করার খাবার

  • ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণঃ শরীরে ভিটামিন ডি এর অভাব এর ফলে দুশ্চিন্তা কিংবা ডিপ্রেশন এর প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। সুতরাং আপনি যদি নিজের মস্তিষ্ককে দুশ্চিন্তা মুক্ত রাখতে চান সে ক্ষেত্রে ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার আপনার দৈনন্দিন খাদ্যাভাসে যুক্ত করার জরুরী। এক্ষেত্রে স্যামন এবং টুনা ফিস উপকারী হতে পারে। এছাড়াও বিভিন্ন দুদ্ধ জাতীয় খাবার যেমনঃ চিজ, দধি, খাঁটি গরুর দুধ ইত্যাদি খাবার ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ। এর পাশাপাশি ডিমের কুসুম আপনার শরীরের ভিটামিন ডি এর ঘাটতি পূরণে যথেষ্ট কার্যকর হবে। ফলের ভিতরে ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ কমলা লেবুর মতো ফল আপনার খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করলে আশানুরূপ ফল পাবেন।
  • গ্রিন টিঃ গ্রিন টি তে থিয়ানিন নামক অ্যামিনো এসিড আছে যাতে রয়েছে অ্যান্টি অ্যানজাইটি ইফেক্ট। এটি প্রতিনিয়ত পান করার ফলে আপনার অ্যাংজাইটি কিংবা দুশ্চিন্তা দূর করতে যেমন উপকারিতা লাভ করবেন ঠিক তেমনভাবেই এটি আপনার মেজাজকে শান্ত এবং স্থিতিশীল রাখবে।
  • গাজরঃ নিউট্রিশন নুপটিয়ালসের প্রতিষ্ঠাতা মান্ডি অ্যান্ড এনরাইট এর মতে মানসিক দুশ্চিন্তা কমানোর অন্যতম সেরা খাবার হচ্ছে তাজা সবজি ও ফল। যার মধ্যে আপেল ও গাজর মানসিক দুশ্চিন্তা কিংবা চাপ কমানোর পাশাপাশি চোয়ালের অনমনীয়তা দূর করতে সহায়তা করে। চিবিয়ে কিংবা কামড়ে খেতে হয় এইরকম খাবার ফোকাসকে পুনঃনির্দেশিত করতে পারে যার ফলে মানসিক দুশ্চিন্তা কিছুটা হলেও কমতে পারে।
  • টক দইঃ টক দই মানসিক চাপ কমাতে খুবই কার্যকর একটি খাবার। টক দই এ যে সকল ব্যাকটেরিয়া থাকে তা আমাদের দেহে আত্মবিশ্বাস এবং সাহস বর্ধন করে এবং এর পাশাপাশি মানসিক চাপ কমায় টক দই খেলে সাময়িকভাবে মানসিক দুশ্চিন্তা কিংবা অশান্তি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
  • বাদাম কিংবা বীজ জাতীয় খাবারঃ কাঠবাদাম, চিনেবাদাম, কাজুবাদাম, আখরোট এই সকল ধরনের শুকনো ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং সবচেয়ে বেশি উপকারী উপাদান ম্যাগনেসিয়াম। কাজুবাদামের ভিটামিন-ই আছে যেটা কিনা মুড ডিজ-অরডারে সাহায্য করে। এছাড়াও বাদামে থাকা বিদ্যমান এ সকল উপাদান মস্তিষ্কের কার্যকারিতা কে সচল রাখতে সাহায্য করে।
  • ডার্ক চকলেটঃ ডার্ক চকলেট এ রয়েছে ফ্লেভনয়েড, যা মস্তিষ্কে নিউরো-ইনফ্লামেশন এবং সেল ডেথ কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও ডার চকলেট এ টিপটোফ্যান বিদ্যমান। যা কিনা মস্তিষ্কে সেরাটনিন এর মত মুড ইনহ্যান্সিং নিউরোট্রান্সমিটার সঞ্চ সঞ্চারণ করতে সহায়তা করে।
  • বেরি জাতীয় ফলঃ আমাদের মস্তিষ্কের কোষগুলোকে সতেজ এবং সজীব রাখতে ভিটামিন সি অত্যন্ত কার্যকরী। ব্লুবেরি, ব্ল্যাকবেরি, স্ট্রবেরি, ইত্যাদি ফলগুলোকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে।
  • ওটসঃ ওটস একটি প্রচুর আঁশযুক্ত খাবার‌ যার শরীরে নানান ধরনের চাহিদা মেটাতে অনেক উপযোগী। বিশেষভাবে সেরোটোনিন নামের শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট তৈরিতে অত্যন্ত কার্যকরী এই ওটস। সেরোটোনিন এমন এক ধরনের রাসায়নিক যৌগ যা আমাদের মস্তিষ্কে ভালো লাগার অনুভূতি জাগিয়ে তোলে আর এই রকমের অনুভূতি মানসিক অবসাদ দূর করতে দারুন কার্যকার।
  • পালং শাকঃ পালং শাকের মতো সবুজ শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম পাওয়া যায় যা মানসিক চাপ নিরসনে কার্যকরী ভূমিকা রাখে এর ফলে মানসিক দুশ্চিন্তা কম হয়।
দুশ্চিন্তা দূর করার ব্যায়াম

  • প্রথমত ব্রিদিং এক্সারসাইজ করা এক্ষেত্রে অনেক উপকারী প্রমাণিত হয়। একটি হাত বুকে এবং একটি হাত পেটে রেখে নাক দিয়ে শ্বাস নিতে হবে এবং শ্বাস গ্রহণের সময় পেট প্রসারিত হবে। শ্বাস গ্রহণ শেষে মুখ দিয়ে নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে হবে। প্রতিনিয়ত এই ব্যায়ামটি ১০ মিনিট করাই কাঙ্খিত ফলাফল পেতে পারেন।
  • রিল্যাক্সিং ব্রেথ ৪-৭-৮ মেথডটি অনুসরণের মাধ্যমে মানসিক দুশ্চিন্তা থেকে অল্প সময়ে মুক্তি পাওয়া যায় এবং এটি দ্রুত ঘুমানোর ক্ষেত্রেও কার্যকর।এই পদ্ধতি অনুসরণের জন্য প্রথমত আপনাকে আরামদায়ক অবস্থান নিতে হবে। পেট সোজা করে চেয়ারে বসুন কিংবা বিছানায় শুয়ে পড়ুন। এর পরবর্তী সময়ে আপনার জিভের ডগা উপরের ঠোঁটে ঠিক পিছনে রাখুন এবং নাক দিয়ে চার সেকেন্ডের জন্য গভীর নিঃশ্বাস নিন। তারপর সাত সেকেন্ডের জন্য আপনার শ্বাস ধরে রাখুন এবং পরবর্তী আট সেকেন্ডের জন্য ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়ুন এবং এই চক্রটি চারবার পুনরাবৃত্তি করুন।
  • মাংসপেশিগুলো শিথিল করা।
  • সুন্দর কোন জায়গাতে নিজেকে আবিষ্কার করে রিলাক্স অনুভূত হওয়া।
এছাড়াও আরো কিছু উপায়

  • আবেগ নিয়ন্ত্রণ করুনঃ অনেক সময় অহেতুক চিন্তার ফলে দুশ্চিন্তা বৃদ্ধি হয় এবং এর ফলে সৃষ্টি হয় মানসিক চাপ যার ফল স্বরূপ মেজাজ খিটখিটে হয় কিংবা অল্পতেই রেগে যাওয়ার মত ঘটনা ঘটে। আর সেই রাগ বর্ষণ হতে পারে নিরীহ কোন মানুষের উপর।
  • কথা বলুনঃ আপনার সমস্যা গুলো সম্পর্কে আপনার নিকটতম বন্ধু, পরিবার পরিজন এর সাথে খোলামেলা কথা বলার চেষ্টা করুন এক্ষেত্রে আপনার মন হালকা হবে এবং এমনটা হতে পারে আপনি আপনার সমস্যার কাঙ্খিত সমাধান পেয়ে যাচ্ছেন। আপনি তাদের সাথে যত কথা শেয়ার করবেন ততই দেখবেন আস্তে আস্তে আপনার উন্নতি ঘটছে আপনার দুশ্চিন্তার পরিমাণ কমছে।
  • শরীরচর্চাঃ নিয়মিত শরীর চর্চা আপনার শারীরিক এবং মানসিক উভয় ধরনের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এমনটা নয় যে শরীর চর্চার ফলে আপনি শুধু আপনার শারীরিক স্বাস্থ্যকেই বর্ধিত করছেন না বরং আপনি যদি নিয়মিত শরীর চর্চা করেন সে ক্ষেত্রে আপনি মানসিক প্রশান্তি লাভ করতে পারেন। এটি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত যে নিয়মিত শরীর চর্চার ফলে ডোপামিন নামক হরমোন নিৎসৃত হয়। আর এই ডোপামিন হরমোন আপনাকে মানসিক প্রশান্তির দেওয়ার সাথে সাথে ডিপ্রেশন কিংবা দুশ্চিন্তার হাত থেকে মুক্ত রাখবে এবং আপনাকে হাসি-খুশি রাখতে সহায়তা করবে। এক্ষেত্রে আপনি হাঁটা, সাইক্লিনিং, জগিং, ইয়োগা, মেডিটেশন এর মত ব্যায়াম অনুসরণ করতে পারেন।
  • যোগ ব্যায়াম করুনঃ শরীরচর্চার পাশাপাশি শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা রক্ষার জন্য খুব প্রাচীন ও সর্ব স্বীকৃত উপায় হল ইয়োগা কিংবা যোগ ব্যায়াম করা। বেশ কয়েক ধরনের যোগ ব্যায়াম রয়েছে এগুলোর ভূমিকা ভিন্ন রকমের হলেও তারা একত্রে অত্যন্ত সুস্থ ও সতেজ রাখতে সহায়তা করবে। শ্বাস প্রশ্বাস ঠিক রাখতে প্রাণায়াম, দূর করতে এবং আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করতে মেডিটেশন, শরীরের রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখতে উত্তরাসন করতে পারেন। যোগ ব্যায়াম করার জন্য সবচেয়ে উত্তম সময় হলো সূর্যাস্তের সময়।
  • ছোট বাচ্চাদের সাথে সময় কাটানঃ আপনি যদি দুশ্চিন্তে ভোগেন কিংবা সাময়িক মন খারাপ হয় সে ক্ষেত্রে বাসায় কোন ছোট বাচ্চা থাকলে তার সাথে চাইলে সময় কাটাতে পারেন এক্ষেত্রে আপনার চিন্তাভাবনাকে কিছু সময়ের জন্য বিমুখ করবে এবং আপনাকে হাসি-খুশি ও চিন্তা মুক্ত রাখতে সাহায্য করবে।
  • সময় পেলে ভ্রমন করুনঃ মানসিক চাপ কমানোর জন্য আরেকটি অত্যন্ত কার্যকরী উপায় হল ভ্রমণ করা আপনি যত পরিমাণে প্রকৃতির কাছাকাছি থাকবেন তত সতেজ থাকবেন এবং নতুন নতুন মানুষ ও বিষয়ের সাথে পরিচিত হলে আপনি হাসি-খুশি থাকা শুরু করবেন এবং দুশ্চিন্তে আস্তে আস্তে কাটতে থাকবে।
  • পোষা প্রাণীর সাথে সময় কাটানঃ বিশেষজ্ঞদের মতে প্রাণীদের সাথে সময় কাটানোর মধ্য দিয়ে মানবদেহে কর্টিসল নামক হরমোন নিৎসৃত হয় যা দুশ্চিন্তা এবং এর পাশাপাশি মানসিক চাপ কমতে অত্যন্ত উপযোগী। এর সাথে সাথে পোষা প্রাণীর সাথে সময় কাটালে একাকীত্ব এবং অবসাদ কমে।
  • ধর্মীয় কাজে মনোনিবেশ করুনঃ আমরা একমাত্র সৃষ্টিকর্তার কাছেই নির্দ্বিধায় নিজেদের মনের কথা খুলে বলতে পারি। এটি সব রকম উপায়ের ঊর্ধ্বে। আমরা প্রার্থনার মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তার কাছে নিজেদের সকল ধরনের সমস্যা দুশ্চিন্তার কথা জানানোর মাধ্যমে নিজেদের ভেতর প্রশান্তি নিয়ে আসতে পারি। নিজেদের ধর্মের ধর্মগ্রন্থ পাঠ করা, নিজেদের ধর্মীয় উপাসনালয় সময় কাটানো, সাধ্য অনুযায়ী দান করা ইত্যাদি আপনাকে মানসিক প্রশান্তি লাভ করতে অবশ্যই সাহায্য করবে।

অতিরিক্ত চিন্তা করলে কি ক্ষতি হয়

অতিরিক্ত চিন্তা কিংবা দুশ্চিন্তা করা অনেক সময় জীবনকে অসহ্যকর করে তোলে। এটি যেমন একটি বদ অভ্যাস ঠিক তেমনি ভাবেই শারীরিক এবং মানসিক অবস্থার ক্ষতিসাধন সহকারে দৈনন্দিন জীবনেও এটি মারাত্মক রকমের কুপ্রভাব ফেলে। যেমনঃ
  • আত্মবিশ্বাস কমানোঃ কোন কাজ করার পূর্বে আপনি যদি শুরুতে এটি নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করা শুরু করেন যে এটি আমার দ্বারা হবে না আমি এটা পারবো না কিংবা ইত্যাদি নেতিবাচক চিন্তা ভাবনা আপনার পুরো কর্মপরিকল্পনাকেই ধূলোসাথ করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। এর ফলে আপনার আত্মবিশ্বাস একদমই কমে যাবে এবং আপনি কোনভাবেই উক্ত কাজে সফল হতে পারবেন না।
  • শারীরিক বিভিন্ন সমস্যাঃ অতিরিক্ত চিন্তা যেমন আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটায় ঠিক তেমনি ভাবেই শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য এটি অত্যন্ত ক্ষতিকর। খিদে না লাগা, ঘুম কম হওয়া, বহুমূত্র রোগ, মাথা ভার হওয়া, ব্যথা করা কিংবা ঝিমঝিম ভাব ধরা, এমনকি হৃদরোগের মতো জটিল রোগ দেখা দিতে পারে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তার কারণে। এর ফলে ঘাড় এবং চোখের ব্যাথা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা ও থাকে।
  • শরীর ক্লান্ত হওয়াঃ অতিরিক্ত চিন্তা করার ফলে আপনার শরীরের প্রডাক্টিভিটি কিংবা কর্মক্ষমতা আস্তে আস্তে হারিয়ে যাবে আপনি ক্লান্তি অনুভব করবেন এবং এর পাশাপাশি আপনার কোন কাজে মন বসবে না।
  • বিষন্নতাঃ আপনি আস্তে আস্তে হাসি খুশি ভাব হারাতে শুরু করবেন এবং এর পাশাপাশি বিষন্নতায় ভুগবেন। বিষন্নতায় ভোগা অবসাদগ্রস্থ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি ক্ষতিসাধনে মানসিক দুশ্চিন্তা কিংবা অতিরিক্ত চিন্তা অনেক বড় দায় বহন করে।
  • অতিরিক্ত চিন্তার কারণে গ্যাস্ট্রিক এবং বদ হজম বাড়ে।
এমনকি আপনার মানসিক অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছে যেতে পারে যে আপনাকে চিকিৎসার জন্য একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারেরও প্রয়োজন পড়তে পারে।

মানসিক দুশ্চিন্তা দূর করার দোয়া

মানসিক দুশ্চিন্তা কিংবা অস্থিরতা এটি মানুষের জীবনকে সম্পূর্ণর উপর বিপর্যস্ত করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। তবে মহান আল্লাহতালা তার বান্দাদের জন্য এটি থেকে রক্ষার পথ খুলা রেখেছেন। মহান আল্লাহ তায়ালার প্রিয় নবী রাসুল (সা:) এ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য বেশ কিছু হাদিসে বেশকিছু দোয়া শিখিয়ে দিয়েছেন। যেগুলো পরের মাধ্যমে একজন দুশ্চিন্তা গ্রস্থ মানুষের উপরে মহান আল্লাহ তায়ালার রহমত বর্ষিত হবে এবং তিনি আমাদের অস্থিরতা কিংবা দুশ্চিন্তা দেখে মুক্তি দান করবেন ইনশাআল্লাহ।
রাসুল (সা:) চিন্তিত হয়ে পড়লে এই বিশেষ দোয়াটি পড়তেনঃ

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজু বিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হুযনি, ওয়া আউজু বিকা মিনাল আজযি ওয়াল-কাসালি, ওয়া আউজু বিকা মিনাল বুখলি ওয়াল জুবনি, ওয়া আউজু বিকা মিন গালাবাতিদ দাইনি ওয়া কাহরির রিজাল।
অর্থঃ হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে, অপারগতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকে আপনার আশ্রয় নিচ্ছি। হযরত আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) চিন্তাগ্রস্ত অবস্থায় এই দোয়া পড়তেন। (বুখারি, হাদিস: ২৮৯৩)

এ সম্বন্ধিত হাদিসে উল্লেখিত আরো বেশ কিছু দোয়া রয়েছে। তন্মধ্যে আরো একটি হলোঃ
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হুজনি, ওয়া আউজুবিকা মিনাল আজজি ওয়াল কাসালি, ওয়া আউজুবিকা মিনাল জুবনি ওয়াল বুখলি, ওয়া আউজুবিকা মিন গলাবাতিদ দাইনি ওয়া কহরির রিজাল।

অর্থঃ হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে দুশ্চিন্তা ও অস্থিরতা থেকে আশ্রয় চাই। আমি আশ্রয় চাই অক্ষমতা ও অলসতা থেকে, আপনার কাছে আশ্রয় চাই ভীরুতা ও কার্পণ্য থেকে, আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই ঋণের বোঝা ও মানুষের রোষানল থেকে।

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা: বলেন, মহানবী সা: এরশাদ করেন, কেউ কখনো দুশ্চিন্তা পড়লে বা দুঃখ পেলে বলবে-
উচ্চারণঃ ‘আল্লাহুম্মা ইন্নী আবদুকা, ইবনু আবদিকা, ইবনু আমাতিকা, নাসিয়াতী বিয়াদিকা, মাদ্বিন ফিয়্যা হুকমুকা, আদলুন ফিয়্যা কাদ্বায়ুকা, আসআলুকা বিকুল্লি ইসমিন্ হুয়া লাকা, সাম্মাইতা বিহি নাফসাকা, আও আনযালতাহু ফী কিতাবিকা, আও আল্লামতাহু আহাদাম্মিন খালক্বিকা, আও ইস্তাসারতা বিহী ফী ইলমিল গাইবি ইনদাকা, আন্ তাজআলাল কোরআনা রবীআ কালবী, ওয়া নূরা সাদরী, ওয়া জালাআ হুযনী, ওয়া যাহাবা হাম্মী।’

অর্থঃ ‘হে আল্লাহ, আমি আপনার দাস, আপনার দাসের ছেলে, আপনার দাসীর ছেলে। আমার কপাল (নিয়ন্ত্রণ) আপনার হাতে, আমার ওপর আপনার নির্দেশ কার্যকর, আমার ব্যাপারে আপনার ফয়সালা ন্যায্য। আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করি আপনার প্রতিটি নামের অসিলায়; যে নাম আপনি নিজের জন্য নিজেই রেখেছেন অথবা আপনি আপনার কিতাবে নাজিল করেছেন অথবা আপনার সৃষ্ট জীবের কাউকে শিখিয়েছেন অথবা নিজ গায়েবি জ্ঞানে নিজের জন্য সংরক্ষণ করে রেখেছেন। আপনি কুরআনকে আমার হৃদয়ের প্রশান্তি, বুকের আলো, দুঃখ অপসারণকারী এবং দুশ্চিন্তা দূরকারী বানিয়ে দিন।’ (আহমাদ : ৩৭১২)

আমাদের শেষ কথা

আশা করি প্রবন্ধটি পাঠ করার মাধ্যমে আপনি এতক্ষণ নিশ্চয় বুঝে গেছেন অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করা আমাদের স্বাভাবিক জীবন যাপন এর জন্য এবং এর সাথে সাথে শারীরিক এবং মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য কত ভয়ংকর হতে পারে সর্বোপরি আমাদের এ বিষয়ে অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে যেন যেকোনো বিষয় নিয়ে স্বাভাবিক দুশ্চিন্তার আকার ধারণা না করে। কোন বিষয় নিয়ে স্বাভাবিক চিন্তাভাবনা করা যথার্থ। 

কিন্তু তা যদি আস্তে আস্তে দুশ্চিন্তা রূপে পরিনিত করে হয় তাহলে মানুষিক চাপ সৃষ্টি হয় যা আমাদের  বিপক্ষে কাজ করে। আশা করি এই প্রবন্ধটি আপনাদের সকলের উপকারে আসবে এবং যে সকল বিষয় নিয়ে এই প্রবন্ধে আলোকপাত করা হয়েছে সেই সকল বিষয়ে অবশ্যই সচেতন থাকার চেষ্টা করবেন। ধন্যবাদ।



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ইজি গ্রাব ওয়েব এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url