পেটে গ্যাসের ব্যথা কমানোর কার্যকরী সেরা উপায়

খাওয়ার রুচি বৃদ্ধির ১০ টি কার্যকরী উপায়"গ্যাসের ব্যথা কমানোর উপায়" সংক্রান্ত প্রবন্ধে সকলকেই স্বাগতম।গ্যাসের ব্যথার ভুক্তভোগী নন এমন মানুষ পাওয়া ভাঁড়। পাকস্থলীতে অতিরিক্ত অ্যাসিড তৈরি হওয়ার জন্য এই ধরনের সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে যা ভুক্তভোগীর জন্য অস্বস্তিকর এবং কষ্টকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে।তাই এই সংক্রান্ত সমস্যার দ্রুত সমাধান সকলেরই কাম্য।ঔষধ কিংবা চিকিৎসা শাস্ত্র ব্যতীত কিছু ঘরোয়া উপায় অবলম্বন এর মাধ্যমে এ ধরনের সমস্যার উপশম সম্ভব।
গ্যাসের ব্যথা কমানোর উপায়
আজকের প্রবন্ধের মাধ্যমে আমরা চেষ্টা করব গ্যাসের ব্যথা সংক্রান্ত সমস্যার সাথে মোকাবেলা করার পথটি একটু সহজ করে দেওয়ার। চলুন আলোকপাত করা যাক গ্যাসের ব্যথা কমানোর উপায় এর পাশাপাশি,গ্যাসের ব্যথার লক্ষণ, পেট ও বুকে গ্যাসের ব্যথা কমানোর উপায় সহ আরো কিছু বিষয়ে।

গ্যাসের ব্যথা কোথায় হয় | গ্যাসের ব্যথার লক্ষণ

শরীরের উপরি অংশে কোনরকম ব্যথা অনুভূত হলে অনেক সময় আমরা দ্বিধায় থাকি এটি ঠিক গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা নাকি অন্য কিছুর। সেক্ষেত্রে অবশ্যই আমাদের এই সম্পর্কে জানা উচিত গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা কোথায় কোথায় হয় এবং ঠিক কোন ধরনের লক্ষণ দেখলে আমরা বুঝতে পারবো যে এটি গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা। চলুন আলোচনা করা যায় এই সম্পর্কিত বিষয়ে।
  • পেটের উপরের মাঝখানে, স্তনের হাঁড়ের নিচে যদি কোন রকম জ্বালাপোড়া অনুভূত হয় তাহলে সে ক্ষেত্রে এটি গ্যাসের ব্যথা।
  • পেটের উপরে ডানদিকে অথবা কাঁধের নিচে তীব্র ব্যথা অনুভূত হলে তা গ্যাস্ট্রিকের ব্যাথা হওয়ার লক্ষণ।
  • অনেক সময় বুকের ডান পাশে খোঁচানোর মত ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
  • বুকের মাঝখানেও গ্যাস্ট্রিকের ব্যাথা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • পেটের মাঝখানে যদি কখনো চিনচিন ব্যথা অনুভূত হয় সেক্ষেত্রে তা গ্যাসের ব্যথা হওয়ার এক ধরনের লক্ষণ হতে পারে।
  • যদি কখনো পেটের ওপরের অংশে অল্প অল্প ব্যথা হয় এবং তা কম বেশি সারাদিনই অনুভব করেন সেক্ষেত্রে অবশ্যই তা গ্যাসের ব্যথা।
  • খাওয়ার পরে অনেক সময় দেখা যায় পেট ফেঁপে রয়েছে এর পাশাপাশি বুকের কাছে ও ভারী কিছু জমে থাকার অনুভূতি হলে তা অবশ্যই গ্যাসের ব্যথা।
  • অনেক সময় দেখা যায় দীর্ঘ সময় অব্দি পেট খালি থাকলে বুকের কিংবা পিছের দিকে ব্যথা অনুভূত হতে পারে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই এটি গ্যাসের ব্যথা।
  • খালি পেটে থাকা অবস্থায় পেট যদি মুচড়ে উঠে তাহলে তা গ্যাসের ব্যথা।
এ ব্যতীত পেটের উপরের অংশ ব্যথা, পেট ফেঁপে থাকা, বমি বমি ভাব হওয়া, বুক জ্বালাপোড়া করা, মুখে টক টক স্বাদ আসা এবং টক ঢেঁকুর উঠার মত উপসর্গ দেখা দিলে তা গ্যাসের ব্যথার দিকে নির্দেশ করে।

গ্যাসের ব্যথা কমানোর উপায়

বর্তমান সময়ে এসে মানুষের গ্যাসের সমস্যা দিন প্রতিদিন বেড়েই চলেছে। অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, ধূমপান করা, অ্যালকোহল কনজিউম করা, খাবারে অত্যাধিক ভেজাল, বিশুদ্ধ শাকসবজি এবং ফলমূলের অভাব ইত্যাদি সহ নানা কারণে গ্যাসের সমস্যা, বর্তমানে রোগে পরিণত হয়েছে। যদিও এই সম্বন্ধিত সমস্যার জন্য ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়ে সমাধান করা আবশ্যক তা বাদেও কিছু পন্থা অবলম্বনের মাধ্যমে আপনি চাইলে গ্যাসের ব্যথা নিরাময় করতে পারেন আর অধিকাংশ সময়েই চিকিৎসা ছাড়াই গ্যাসের ব্যাথা দূর হয়ে যায়। নিম্নে সেরকম কিছু কৌশল, খাবার কিংবা জীবনযাত্রার প্রয়োজনীয় পরিবর্তন নিয়েই আলোচনা করা হলো।
  • পুদিনা পাতার রসঃ এই ভেষজটি প্রাচীনকাল থেকেই অত্যন্ত প্রচলিত গ্যাসের ব্যথা কমানোর কিংবা নিরাময়ের জন্য। আপনি যদি নিয়মিত পুদিনা পাতার রস কিংবা পুদিনা পাতায় চিবিয়ে খান সেক্ষেত্রে গ্যাস্ট্রিক থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
  • টক দইঃ টক দই খাবার হজম করার ক্ষেত্রে সহায়তা করে থাকে এর ফলে অ্যাসিডিটিজনিত সমস্যার সমাধান হয়। নিয়মিত খাওয়ার পর টক দই খাওয়ার অভ্যাস করা আপনার জন্য অনেক উপকারী হতে পারে।
  • মালিশঃ যদি হঠাৎ করে খুব বেশি গ্যাসের ব্যথা অনুভূত হয় সেক্ষেত্রে হাতের পাতা দিয়ে হালকা করে পেটে মালিশ করুন। পেটের উপর থেকে নিচের দিকে হালকা করে ম্যাসাজ করুন দেখবেন ব্যথা অনেকাংশে নিরাময় হয়ে গেছে।
  • সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে জল পানঃ এটি অত্যন্ত কার্যকরী একটি উপায় যা সম্পর্কে আমাদের বাসা বাড়িতে গুরুজনরাও উপদেশ দিয়ে থাকেন। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে আপনি যদি খালি পেটে এক গ্লাস গরম পানি খান সেক্ষেত্রে এটি অত্যন্ত কার্যকর হবে আপনাকে গ্যাসের ব্যথা হতে বাঁচানোর জন্য। পানি যদি কুসুম গরম হয় সেক্ষেত্রে কার্যকারিতা আরো বেশি হবে।
  • ঘুমানোঃ যারা গ্যাসে সমস্যায় ভুগেন তাদের ক্ষেত্রে খাবার সাথে সাথেই ঘুমিয়ে পড়া একটু বোকামি হবে। কারণ খাবার হজম প্রক্রিয়াধীন অবস্থায় রয়ে যায় আর খাবার হজম না হওয়ার কারণে সৃষ্ট হয় গ্যাসের ব্যথা জনিত সমস্যা। ঘুমানোর পূর্বে এবং খাবার মিনিট ত্রিশেক পরে একটু হাঁটাহাঁটি করুন সেক্ষেত্রে আপনার খাবার দ্রুত হজম হবে।
  • ডাল জাতীয় খাবার না খাওয়াঃ গ্যাসের সমস্যার ভুক্তভোগী হলে আপনাকে অবশ্যই এড়িয়ে চলতে হবে দল জাতীয় খাবার। এর মধ্যে রয়েছে মসুরের ডাল, বুটের ডাল, ছোলা, বীণ ইত্যাদি। এদের মধ্যে সবথেকে বেশি ক্ষতি করে মসুরের ডাল। তাই অবশ্যই গ্যাসের ব্যথা কমাতে আপনাকে এটি এড়িয়ে চলতে হবে।
  • মৌরিঃ গ্যাসে ব্যথা কমাতে আপনাকে চেষ্টা করতে হবে পেট ঠান্ডা রাখার সে ক্ষেত্রে আপনাকে সাহায্য করবে মৌরি ভেজানো জল। গ্যাসের ব্যথা কমানোর ক্ষেত্রে মৌরি অনেক কার্যকর। এতে এমন কিছু উপাদান বিদ্যমান রয়েছে যা পেটে জমে থাকা গ্যাস শুষে নিতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
  • গরম পানির সেঁকঃ যে সকল ব্যক্তিদের হজম সম্পর্কিত সমস্যা থাকে এবং এর ফলে গ্যাসের ব্যথা সৃষ্টি হয় তাদের ক্ষেত্রে এই কৌশলটি উপযোগী হবে। বাজারে পাওয়া হিটিং প্যাড নিয়ে কিংবা বাসা বাড়িতে থাকা প্লাস্টিকের বোতল ব্যবহার করে তাতে পরিমান মত গরম পানি নিয়ে পেটে, পিঠে অর্থাৎ ব্যথা অনুভূত স্থানে সেঁক দিতে পারেন। এতে করে দেখবেন কিছুক্ষণের ভিতরে আপনার ভোজ্য খাবার হজম হয়ে গিয়েছে এবং গ্যাসের ব্যথা নিরাময় হয়েছে।
  • গুড়ঃ বুকে জ্বালাপোড়া কিংবা গ্যাসের ব্যথা জনিত সমস্যা তাৎক্ষণিকভাবে নিরাময় করতে সাহায্য করে গুড়। এরকম ব্যথা অনুভূত হলে সাথে সাথেই এক টুকরো গুড় মুখে দিয়ে দিন। চেষ্টা করুন চিবিয়ে না খেয়ে ধীরে ধীরে চুষে খেতে যেন এটি গলে যায়। এতে করে দেখবেন খুব অল্প সময়ে গ্যাসের ব্যথা কমে গেছে।তবে এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি অবলম্বন না করাই শ্রেয় এতে তাদের ক্ষতি হতে পারে।
  • শসাঃ পেট ঠান্ডা রাখতে শসা অতুলনীয় একটি সবজি। এতে থাকা ফ্লেভানয়েড এবং অ্যাইনফ্লেমেটরি উপাদান যেমন পেটে গ্যাসের চাপ কমিয়ে আনে ঠিক তেমনিভাবে বুকের জ্বালা পোড়া ভাব দূর করতে সাহায্য করে।
  • হাঁটাহাঁটি ও শরীরচর্চাঃ এটি গবেষণায় প্রমাণিত যে শরীর চর্চার ফলে যেমন গ্যাসের ব্যথা নিরাময় হয় এর পাশাপাশি পেটের ফাঁপা ভাব ও কমে যায়। গ্যাসের ব্যথা কমানোর ক্ষেত্রে কিছু কার্যকর শরীর চর্চা রয়েছে। তন্মধ্যে একটি হলো- পিঠের উপর ভর করে শুয়ে শূন্যে পা দুইটিকে বাইসাইকেলের মত চালানো। এটি অত্যন্ত কার্যকর একটি ব্যায়াম যা আপনাকে গ্যাসের ব্যথা হতে মুক্তি দিতে পারে। যেমনটা পূর্বে বলেছি খাবার খাওয়ার পর কিছু সময় হাঁটলে তা যেমন খাবার হজম করতে সহায়তা করে ঠিক তেমনভাবেই গ্যাসের ব্যথা হতে আপনাকে দূরে রাখবে। এর পাশাপাশি।
  • যোগব্যায়ামঃ কিছু যোগব্যায়াম রয়েছে যা গ্যাসের ব্যথা এবং এই সংশ্লিষ্ট উপসর্গ গুলো থেকে রক্ষা পেতে আপনাকে সাহায্য করতে পারে যাদের মধ্যে অন্যতম হলো চাইল্ডস পোজ এবং সিটেড টুইস্ট। ইউটিউব এ সার্চ করলেই আপনি এ সম্পর্কিত অনেক ভিডিও বার্তা পাবেন শিখে দেখুন এর উপকারিতা আপনি নিজে টের পাবেন।
  • উচ্চ আঁশ সমৃদ্ধ খাবারঃ উচ্চ আঁশ অসমৃদ্ধ খাবার হজম ক্রিয়া উন্নত করতে এবং গ্যাসের ব্যথা কমাতে সহযোগিতা করে। বাদাম, বীজ, শাকসবজি, সবুজ শাকসবজি ইত্যাদি দৈনন্দিন খাদ্যাভাসে যুক্ত করুন দেখবেন আশানুরূপ ফল পাচ্ছেন।
  • পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পানঃ গ্যাসের ব্যথা হতে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে চাইলে অবশ্যই আপনাকে সারাদিনে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতেই হবে। পুরুষদের ক্ষেত্রে প্রতিদিন ৩.৭ লিটার এবং নারীদের ক্ষেত্রে আনুমানিক ২.৭ লিটার পানি পান করো সুস্থ থাকার জন্য প্রযোজ্য।

পেটে গ্যাসের ব্যথা কমানোর উপায়

প্রধানত পাকস্থলীতে অতিরিক্ত এসিড তৈরি হওয়ার ফলে পেটে গ্যাসের ব্যথার মত সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে।সাধারণত কিছু বেদনানাশক ওষুধ সেবন এর মাধ্যমেও পেটের গ্যাসের ব্যথা নিরাময় করা সম্ভব হয় কিন্তু প্রাকৃতিকভাবে কোন শারীরিক সমস্যা বিশেষ করে গ্যাসের সমস্যা দূর করা অনেক বেশি কার্যকর এবং সুবিধাজনক। চলুন আলোচনা করা যাক এমন কিছু কৌশল নিয়ে যার মাধ্যমে আপনি পেটের গ্যাসের ব্যথা নিরাময় করতে পারবেন।
  • জিরা মসলা ব্লেন্ডার মেশিনে ভর্তা করে দিনে এক চা চামচ করে খাওয়া পেটের গ্যাসের ব্যথা কমানোর জন্য অত্যন্ত উপযোগী।
  • সবসময় চেষ্টা করা উচিত আমি জাতীয় খাবার এগিয়ে চলার এবং যতটা সম্ভব শর্করা জাতীয় খাবার দৈনিন্দন খাদ্যাভাসে যুক্ত করার।
  • পেটের গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা জন্য অনেক উপকারী হবে ভেষজ চা। বিভিন্ন ঔষধি গুণসম্পন্ন গাছের পাতা দিয়ে তৈরি চা শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং প্রদাহ বিরোধী উপাদান সমৃদ্ধ। ভেষজ চা যেমন হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে ঠিক তেমনি ভাবেই পেটে গ্যাসের ব্যথা কমাতে অত্যন্ত সহায়ক। আদা, পুদিনা, ক্যামোমাইল ও লেবু এগুলোর মধ্যে অন্যতম।
  • টক দই এই বিষয়ে আপনার জন্য অনেক বেশি উপযোগী হতে পারেন। টক দই ব্যাকটেরিয়ার ভালো উৎস যা হজমের ক্ষেত্রে অত্যন্ত কার্যকর। আপনি চাইলে এতে ভাজা জিরা এবং এর পাশাপাশি বিট লবণ মিশিয়ে এরশাদ বাড়াতে পারেন।
  • লবঙ্গ যেমন সর্দি কাশি এবং ঠান্ডার ক্ষেত্রে অনেক উপকারী ঠিক তেমনি ভাবেই পেটের গ্যাসের ব্যথা কমানোর ক্ষেত্রেও এর জুড়ি মেলা ভার। এটি হজম ভালো রাখতে আপনাকে সহায়তা করবে। মুখে দুই থেকে তিনটি লবঙ্গ রেখে দেখুন না সুফল অবশ্যই পাবেন।
  • পেটের গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা নিরাময়ের ক্ষেত্রে গরম সেঁক আপনাকে অনেক বেশি সাহায্য করতে পারে। হিটিং প্যাড ব্যবহার করে কিংবা বাসা বাড়িতে থাকা প্লাস্টিকের বোতল ব্যবহারের মাধ্যমে গরম পানি দিয়ে আপনি পেটে সেঁক দিতে পারেন। দেখবেন খুব অল্প সময়ের ভিতরে পেটের ব্যাথা উপশম হয়ে গেছে।
  • জোয়ান ও মৌরি একসঙ্গে চিবিয়ে খাওয়ার মাধ্যমে আপনি এ ধরনের ব্যাথা থেকে খুব সহজেই পরিত্রাণ পেতে পারেন। এটি এক চামচই যথেষ্ট।
  • জল জিরা জলে গুলে খেলেও আপনি এই ব্যথা থেকে আরাম পেতে পারেন।
  • পেটে গ্যাসে ব্যথা অনুভূত হলে কুসুম গরম জল পান করা অনেক উপকারী হবে এর ফলে গ্যাস নিচের দিকে নেমে যাবে।
  • আদা নামক এই ভেষজ উপাদানটিতে সবচাইতে বেশি কার্যকরী অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদানসমূহ বিদ্যমান রয়েছে যা গ্যাসের ব্যথা উপশম করতে অনেক বেশি কার্যকর। আপনি চাইলে আদা চুষে খেতে পারেন কিংবা চাইলে চা বানিয়েও খেতে পারেন।
  • এলাচ ও লবঙ্গ গুড়া গ্যাস জনিত পেট ব্যথার সমস্যা সমাধানের জন্য অত্যন্ত উপযোগী এর পাশাপাশি এর ফলে মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়।
  • ডুবো তেলে ভাজা খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন তাছাড়া গ্যাসের ব্যথা কিংবা এই সংক্রান্ত সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব নয়।
  • ব্রকলি, ফুলকপি, বাঁধাকপি, পালং শাক এর মতো শাকসবজি অনেক বেশি ভালো হবে গ্যাসের ব্যাথা নিরাময়ের জন্য এবং এর পাশাপাশি আপনার সুস্বাস্থ্য গঠনের জন্য।
  • আপনি যদি গ্যাসের ব্যথার জন্য কোন রকম ওষুধ সেবন করতে না চান সেই ক্ষেত্রে প্রতিদিন সকালে উঠে খালি পেটে এক গ্লাস পানি পান আপনাকে ওষুধের থেকে বেশি উপকারে এনে দিবে। এছাড়াও আপনি সারাদিনে যত বেশি পরিমাণে পানি পান করবেন ততই আপনার হজম শক্তি বৃদ্ধি পাবে।

বুকে গ্যাসের ব্যথা কমানোর উপায়

অনেকের মাঝেই গ্যাসের জন্য বুকের ব্যথা সংক্রান্ত সমস্যা লক্ষ্য করা যায়। বর্তমানে অধিকাংশ মানুষই এরকম সমস্যায় ভুগেন। গ্যাসের জন্য বুকে ব্যথা হওয়া কিংবা জ্বালাপোড়া হওয়া মোটেও অবহেলার কোন বিষয় নয় অবশ্যই ক্ষেত্রে আপনাকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে তা না হলে বুকের জ্বালাপোড়া ভাব থেকে ক্যান্সার পর্যন্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। চলুন আলোচনা করা যাক বুকে গ্যাসের ব্যথা কমানোর কিছু উপায় নিয়ে।
  • প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য বাসা বাড়িতে থাকা অ্যান্টাসিড ওষুধ কিংবা অ্যান্টাসিড প্লাস আপনাকে এই ধরনের সমস্যা থেকে পরিত্রান পেতে সাহায্য করবে।
  • হুট করে যদি দেখেন গ্যাসের জন্য বুক ব্যথা করছে সে ক্ষেত্রে ঢক ঢক করে পানি খেতে থাকুন। ব্যাথা নিরাময়সহ গ্যাস দূর করতে অনেক সাহায্য করবে।
  • উঠে একটু হাঁটাহাঁটি করুন এবং হালকা শরীর নাড়াচাড়া করুন যাতে কোন জায়গায় গ্যাস আটকে থাকলে এবং এই কারণে ব্যথা সৃষ্টি হলে তা বের হয়ে যায়।
  • আয়ুর্বেদিক হামদার্দ এর কিছু সিরাপ পাওয়া যায় যা আপনি চাইলে কিনে রাখতে পারেন। গ্যাসের কারণে যদি কোন সময় বুক ব্যথা হয় তার নিরাময়ের জন্য এবং এর পাশাপাশি গ্যাসের ব্যথা কমানোর জন্য এটি অনেক সহায়ক হবে।
  • মুখে দুই থেকে তিনটি লবঙ্গ নিয়ে রেখে দেন এটি আপনাকে গ্যাসের ব্যথা থেকে নিস্তার পেতে সহায়তা করবে।
  • আপেল সিডার ভিনেগার অ্যাসিটিক মাইক্রোন তৈরি করার মাধ্যমে হজমে অনেক সহায়ক হয়। এক্ষেত্রে যদি আপনার গ্যাস্ট্রিকের ফলে বুক ব্যথা সহ পেটে ব্যথা হয় তাহলে আপনি তৎক্ষনোত্তা পান করতে পারেন।
  • আদা, লবঙ্গ এবং এর সাথে এক টুকরো পাতি লেবু মিশিয়ে খেয়ে দেখতে পারেন এতে ঝট করে সমাধান হবে গ্যাসের ব্যথা জনিত সমস্যা।
  • তেল জাতীয় খাবার, জাঙ্ক ফুড, ফাস্টফুড, ক্রিয়াজাতকরণ ক্রিয়াজাতকরণ খাবার, চর্বিযুক্ত খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন এইগুলো এড়ানো ব্যতীত আপনার হার্ট ভালো রাখা সম্ভব নয়।
  • গ্যাসের কারণে ব্যথা অনুভূত হলে রেহাই পাওয়ার জন্য আদা চিবিয়ে কিংবা চুষে খেতে পারেন।
  • যতটা সম্ভব আঁশ যুক্ত খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন এর ফলে হজমশক্তি বৃদ্ধি পাবে এবং গ্যাস আটকে বুকে ব্যথা অনুভূত হবে না।

কি খেলে দ্রুত পেটের গ্যাস কমে?

বেশ কিছু খাবার রয়েছে যা গ্যাসের ব্যথা কমানোর ক্ষেত্রে অনেক বেশি উপযোগী হিসেবে বিবেচিত হয়। চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই সকল খাবার গুলো সম্পর্কে।
  • টক দইঃ টক দই হজমের গোলমাল ঠেকাতে অনেক বেশি কার্যকরী। এটি খেলে খাবার অনেক দ্রুত হজম হয়।
  • জিরাঃ কম বেশি আমাদের সবারই রান্নাঘরে নামক মসলাটির উপস্থিতি বিদ্যমান। জিরা গ্যাস্ট্রিকজনিত সমস্যা নিরাময়ের ক্ষেত্রেও অনেক উপকারী। এর ফলে বদহজম এবং অ্যাসিডিটির মতো সমস্যা হতে মুক্তি পাওয়া যায়।
  • তুলসী পাতাঃ ওষুধি গুণসম্পন্ন এই ভেষজ গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করানোর জন্য অনেক বেশি কার্যকরী। নিয়মিত তুলসী পাতা খেলে ওষুধ ছাড়াই গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা হতে আপনি মুক্তি পেতে পারেন।
  • ক্যামোমিল টিঃ ক্যামোমিল টি গ্যাস্ট্রিকের কারণে সৃষ্ট ব্যথা হতে আপনাকে মুক্তি দিবে এবং এর পাশাপাশি আলসার কিংবা পেটের ঘা হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে কমিয়ে দিবে। এই চা হজম শক্তি বাড়ানোর ক্ষেত্রেও অনেক বেশি উপযোগী।
  • কলাঃ কলা কমবেশি আমাদের সকলের কাছেই অনেক প্রিয়। আপনি জেনে খুশি হবেন গ্যাসের সমস্যা সমাধানের জন্যও এর বিকল্প নেই। প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে একটা করে কলা খেলেই আপনি এর উপকারিতা বুঝতে পারবেন। কড়াই প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে যা প্রাকৃতিক অ্যান্টাসিডের কাজ করে থাকে।
  • ভেষজ চাঃ ভেষজ চা এ নানা ধরনের ঔষধি গুনসম্পন্ন গাছপাতা বিদ্যমান থাকে। এটি পুরোটাই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং প্রদাহবিরোধী উপাদান সমৃদ্ধ একটি পানীয়। ভেষজ চা হজমে সাহায্য করে এবং এর পাশাপাশি গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা কমাতেও এটি কার্যকর।
  • শসাঃ পেটকে ঠান্ডা রাখতে এবং গ্যাস্ট্রিকের মত সমস্যা হতে দূরে রাখতে শসা অনেক উপযোগী উপাদান।
  • লাউঃ লাউ ঠিক শসার মত পেটকে ঠান্ডা রাখতে এবং গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা উপশম করতে সহায়তা করে
  • লবঙ্গঃ বেশ কয়েকবার লবঙ্গের কথা আমাদের প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে। আপনি বুঝতে পারছেন এটি কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা নিরাময়ের জন্য।
  • আদাঃ গ্যাস্ট্রিক জনিত সমস্যা হতে আপনার শরীরকে দূরে রাখতে আদা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • গুড়ঃ গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা উপসম এর জন্য এবং এর পাশাপাশি বুকের জ্বালাপোড়া তাৎক্ষণিকভাবে নিরময় করতে গুরু অত্যন্ত সাহায্য কর একটি উপাদান। তবে এক্ষেত্রে চেষ্টা করতে হবে চাপিয়ে নয় বরঞ্চ চুষে খেতে যেন এটি গলে যাই।
  • কুসুম গরম পানিঃ সকালে খালি পেটে কুসুম গরম পানি খেলে আপনার শরীর গ্যাসস্টিক সংক্রান্ত কোনো ধরনের সমস্যা থাকবে না। এটি অনেকটাই ঔষুধের মত কার্যকরী।

পেটে গ্যাসের ব্যথা কমানোর দোয়া

জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এবং প্রতিটি সমস্যা সমাধানের জন্য মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের জন্য একটি পথ খোলা রেখেছেন এবং তা হল তার কাছে ফরমায়েশ করা দোয়ার মাধ্যমে যেন সেই সমস্যা কিংবা বিপদ হতে আমরা রক্ষা পেতে পারি। সেই রকম ভাবেই পেট ব্যথা হতে নিরময় পাওয়ার জন্য রাসূল (সা:) মহান আল্লাহর নিকট হতে বর্ণিত দোয়া আমাদের শিখিয়ে গেছেন।উক্ত দোয়া টি হলোঃ 

উচ্চারণঃ আউজু বিইজ্জাতিল্লাহি ওয়া কুদরাতিহি মিন শাররি মা আজিদু ওয়া উহাজিরু।

অর্থঃ আল্লাহর মর্যাদা ও তার কুদরতের উসিলায় আমি যা অনুভব ও ভোগ করছি, তা থেকে মুক্তি চাচ্ছি।
তবে অবশ্যই মনে রাখতে হবে শারীরিক যে কোন জটিলতার পাশাপাশি যদি পেট ব্যথা কখনো অনুভূত হয় তবে সময় নষ্ট না করে দোয়া পড়ার পাশাপাশি অবশ্যই তা প্রতিকারের জন্য দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। পেট ব্যথা যদি তীব্র হয় তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক বেদনাশক ওষুধ সেবন করতে হবে।

আমাদের শেষ কথা

"গ্যাসের ব্যথা কমানোর উপায়" সম্পর্কিত আজকের প্রবন্ধে আমরা চেষ্টা করেছি এমন কিছু কৌশল এবং খাবার এর কথা আপনাদের সামনে তুলে ধরার যেগুলো গ্যাসের ব্যথা নিরাময়ের পাশাপাশি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হতে আপনাদের রক্ষা করবে। পরিস্থিতি অনুযায়ী কিংবা শারীরিক অবস্থার ভিত্তিতে এই কৌশল গুলো অনেকের ক্ষেত্রে কার্যকর নাও হতে পারে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাদের সচেতন থাকতে হবে। 

সর্বোপরি বেশি পরিমাণে সমস্যা অনুভূত হলে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে এবং তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী চলতে হবে।অবশ্যই এড়িয়ে চলতে হবে এমন সকল খাবার সমূহ যা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার সাথে সরাসরি সম্পর্কিত। সুস্থ ও সবল দেহর জন্য সবথেকে বেশি প্রয়োজন সার্বিক সচেতনতা। আশা করি প্রবন্ধটি আপনাদের সকলের উপকারে আসবে। ধন্যবাদ সকল পাঠকদের।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ইজি গ্রাব ওয়েব এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url