ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা - ডায়াবেটিস হলে যা যা খাবার খেতে হবে

দ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার উপায়"ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা" সম্পর্কিত আজকের প্রবন্ধে সকলকেই স্বাগতম। আমাদের বাসা বাড়িতে কিংবা আশেপাশে এইরকম অনেক মানুষ রয়েছেন যারা ডায়াবেটিস এর ভুক্তভোগী এবং আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন এই রোগ থেকে মুক্তি পেতে। চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পাশাপাশি দৈনন্দিন খাদ্যাভাসের পরিবর্তনও এই নিরব ঘাতক নিরাময়ের জন্য অনেকাংশেই সহায়ক হতে পারে।
ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা
আজকের আমাদের প্রবন্ধ এমন খাদ্য তালিকা নিয়েই যা ডায়াবেটিস রোগীর স্বাস্থ্যের জন্য ইতিবাচক হবে এবং এর সাথে আমরা এমন কিছু খাদ্য তালিকা নিয়ে কথা বলব যেগুলো গ্রহণ করা একজন ডায়াবেটিস ভুক্তিভোগী জন্য কখনোই উচিত হবে না।

ডায়াবেটিস কি?

ডায়াবেটিস মূলত একটি বিপাকজনিত রোগ এবং এটি একটি গুরুতর ও দীর্ঘমেয়াদী অবস্থা। ডায়াবেটিস বহুমূত্র রোগ কিংবা মেলাইটাস নামেও পরিচিত। মানবদেহে ইনসুলিন নামে একটি হরমোন সবসময় বিদ্যমান থাকে আর এটির পরিমাণ কমে গেলে বিভিন্ন ধরনের বিপাকীয় ত্রুটি দেখা যায়। যখন শরীর এই ইনসুলিন নামক হরমোন উৎপাদন করে না কিংবা উৎপাদিত ইনসুলিন কার্যকর ভাবে ব্যবহার করতে পারে না তখন রক্তে গ্লুকজ এর পরিমাণ স্বাভাবিক এর চেয়ে বৃদ্ধি পায় আর শরীরের এই পরিবর্তনকেই ডায়াবেটিস হিসেবে গণ্য করা হয়।

ডায়াবেটিস কেন হয়?

কোন খাদ্য গ্রহণের পর আমাদের দেহ খাদ্যে থাকা শর্করা কে ভেঙে গ্লুকোজ রূপান্তরিত করে। আমরা পূর্বে জেনেছি মানবদেহে অগ্ন্যাশয় নামক গ্রন্থি থেকে ইনসুলিন নামক হরমোন নিঃসৃত হয়। ইনসুলিন রক্তে অতিরিক্ত গ্লুকোজ কমানোর কাজ করে। আর যখন আমাদের দেহে ইনসুলিন উৎপাদন কমে যায় কিংবা দেহের কোষ গুলো ইনসুলিনের প্রতি কার্যকর সাড়া প্রদান করতে ব্যর্থ হয় তখনই শরীরে ডায়াবেটিস রোগ দেখা যায়।

সুতরাং ডায়াবেটিস রোগীর প্রধান কারণ হলো ইনসুলিন উৎপাদন ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাওয়া কিংবা দেহের কোষ গুলোর ইনসুলিন এর প্রতি কার্যকর সারা প্রদান করতে ব্যর্থ হওয়া। এছাড়াও এই নিরব ঘাতক ব্যাধির আরো বেশ কিছু কারণ রয়েছেঃ
  • খাদ্যাভ্যাস ও ডায়াবেটিসের কারণে হিসেবে বিবেচিত হয় ছোটবেলা থেকেই অনেকে অনেক বেশি পরিমাণে মিষ্টি খেতে অভ্যস্ত থাকে অনেক বেশি পরিমাণে কিংবা কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার সমূহ যেমন ভাত, রুটি, চিড়া,মুড়ি, বিস্কুট বেশি পরিমাণে খেয়ে থাকে তাহলে তুলনামূলক তাদের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • বংশগত কিংবা পারিবারিক ইতিহাস এর কারণে অনেকে ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে।
  • ওজন বেশি হওয়া কিংবা কায়িক শ্রমের বেশি অভ্যস্ত না হওয়া ব্যক্তিদের টাইপ ২ ডায়াবেটিস এ আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • খাদ্য তালিকায় যদি অতিরিক্ত চিনি এবং কম ফাইবার যুক্ত খাবার থাকে সেক্ষেত্রে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • এছাড়া তামাক জাতীয় দ্রব্য সেবন করাও ডায়াবেটিস রোগের কারণ হতে পারে।
  • একজন ব্যক্তি যদি অতিরিক্ত মানসিক চাপে থাকে তাহলে তার যেমন অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে ঠিক তেমনি ভাবেই ডায়াবেটিস রোগ সে ব্যক্তির দেহকে চেপে ধরতে পারে।

ডায়াবেটিস রোগের লক্ষণ

ডায়াবেটিস রোগ নিরাময়ের পূর্বে কিংবা এই রোগ সম্পর্কে সচেতন হওয়ার জন্য আমাদের জানা দরকার এই রোগের লক্ষণগুলো। সুতরাং চলুন জেনে নেওয়া যাক ডায়াবেটিস রোগের লক্ষণঃ
  • মিষ্টি জাতীয় খাদ্যের প্রতি আকর্ষণ বেড়ে যাওয়া।
  • হঠাৎ করে কারণ ছাড়া ওজন কমতে থাকা।
  • ঘনঘন প্রসব হওয়া।
  • ক্ষুদা বেড়ে যাওয়া।
  • শরীরে অল্পতে ক্লান্তি ভাব দেখা দেওয়া।
  • শরীরে কোন জায়গায় ক্ষত হলে কিংবা কাটা থাকলে তার সহজে না শুকানো।
  • স্পর্শ বা ব্যথার অনুভূতি কমে যাওয়া।
  • অতিরিক্ত পিপাসা।
  • চোখের দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া বা ঝাপসা দেখা।
  • ত্বকের রঙ এর বিবর্ণতা।
  • চামড়া শুষ্কতা ভাব।
  • মেজাজ এর ভারসাম্য নষ্ট হওয়া সহজেই বিরক্ত কিংবা খিটখিটে ভাব আশা।
এছাড়াও টাইপ-১ ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত রোগীদের সময়ের সাথে সাথে শরীরে উচ্চ সর্করা উপস্থিত থাকার ফলে অন্যান্য বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় ভুগতে পারেন যেমনঃ কিডনির রোগ, হৃদরোগ, স্নায়ু ক্ষয় ও দাঁতের সমস্যা।

ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা

সঠিক খাদ্যাভাস ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যে খাবারগুলো খাচ্ছেন তার মাধ্যমেই অনেকখানি ডায়াবেটিস নিরাময় করতে পারবেন কিংবা অপরপক্ষে এমন কিছু খাবার রয়েছে যা আপনার শরীরে সুগারের মাত্রা বাড়িয়ে এই নিরব ঘাতক রোগটির কার্যক্ষমতা আরো বাড়িয়ে দিবে। চলুন জেনে নেওয়া যাক ডায়াবেটিস রোগীদের যা যা খাবার সেই খাবার গুলোর তালিকা সম্পর্কে।
  • শ্বেতসার সমৃদ্ধ খাবারঃ লাল কিনবা বাদামি চালের ভাত, লাল আটার রুটি পাউরুটি ইত্যাদি।
  • টক ফলঃ প্রচুর পরিমাণে টক ফল খাওয়া আপনাকে এ বিষয়ে অনেক সাহায্য করতে পারে। তবে চেষ্টা করবেন একবারে বেশি পরিমাণ না খেয়ে সারা দিনে পাঁচ থেকে ছয় ভাগে ভাগ করে খাওয়া।
  • টক দইঃ মিষ্টি খাবারের বদলে টক দই খেতে পারেন।
  • শাকসবজিঃ‌ পালং শাক, লাল শাক, পুঁই শাক, কলমি শাক, ডাঁটা শাক, কচু শাক, লাউ শাক, কুমড়ো শাক, পাট শাক, হেলেঞ্চা শাক, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা, ওলকপি, টমেটো, কাঁচা পেঁপেঁ, শশা, খিরা, উচ্ছে, করলা, ঝিঙা, ধুন্ধল, চাল কুমড়া, ডাঁটা, লাউ, সজনে, বেগুন, মরিচ, কলার মোচা ইত্যাদি।
  • ফলমূলঃ কালোজাম, লেবু, আমড়া, বাতাবি লেবু ,কামরাঙ্গা বাঙ্গি, জামরুল, আমলকি কচি, ডাবের পানি, ইত্যাদি।
  • মসুর ডালঃ মসুর ডালে এক ধরনের রেজিস্ট্যান্স স্টার্চ নামক কার্বোহাইড্রেট বিদ্যমান যা মানব শরীরে রক্তের শর্করার মাত্রার উপর খুব কম প্রভাব ফেলে।
  • রসুনঃ রসুনের ঔষধি গুনা কোন সম্পর্কে আমরা কম বেশি সবাই অবগত। বাজারে পাওয়া সুস্বাদু ভেষজ গুলোর ভিতর এটি একটি। রক্তে শর্করের মাত্রা বজায় রাখতে এবং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ রাখতে অত্যন্ত কার্যকরী রসুন।
  • চর্বিযুক্ত সকল মাছঃ সার্ডিন এবং ম্যাকেরেল ও এর পাশাপাশি সালমন মাছ ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড এর দুর্দান্ত উৎস। যা ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ এবং রক্তের লিপিড উন্নত করতে সহায়ক এবং এর পাশাপাশি হার্টের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে ও অনেক বেশি কার্যকরী।
  • তিশিঃ ইংরেজিতে ফ্লাক্স শিড নামে পরিচিত তিসিতে রয়েছে উচ্চ পরিমাণে ফাইবার ওমেগা থ্রি ওমেগা সিক্স ও ফ্যাটি এসিড। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ উক্ত উপাদান গুলো অনেক বেশি কার্যকরী। এই উপাদান গুলো রক্তে চিনির মাত্রা যেমন হ্রাস করে ঠিক তেমনিভাবে এর স্থায়িত্ব বৃদ্ধি করে।
  • তুলসীঃ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে তুলসীর কার্যকারিতা লিখে প্রকাশ করা সম্ভব নয়। এটি প্রাকৃতিক ইনসুলিন হিসেবেও পরিচিত। রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমাতে এটি অত্যন্ত কার্যকর। খালি পেটে তুলসির সেবন আপনাকে আশানুরূপ ফল এনে দিবে। আপনি যদি ওই শ্রেণীর মানুষের ভিতরে হন যারা কিনা তুলসী পাতার রস খেতে পছন্দ করেন না সে ক্ষেত্রে বিকল্প হিসেবে চা কিংবা অন্য কোন পানীয়র সাথে মিশিয়েও এটি পান করতে পারেন।
  • খেজুরঃ অনেকেই এটি নিয়ে বিভ্রান্তে থাকেন যে খেজুর মনে হয় ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অনুপযুক্ত কিংবা এর তেমন কোন প্রভাব নেই কিন্তু বাস্তবতা একদমই ভিন্ন। খেজুরে উচ্চফাইবার বিদ্যমান যা কিনা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে অনেক বেশি সহায়ক। যেহেতু ফাইবার শরীরে গ্লুকোজের শোষণ ধির করে ফেলে এবং রক্তের সুগারের মাত্রাকে স্থির করে সে ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খেজুরের বিকল্প জুড়া ভার।
  • মেথিঃ মেথি সাধারণত মানব দেহের রক্তে গ্লুকোজ সহনশীল করতে সহায়তা করে এবং এর পাশাপাশি দেহে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ রাখতেও এটা অনেক বেশি কার্যকরী।
  • করোলাঃ ডায়াবেটিসের প্রতিরোধক হিসেবে করলার কথা আমরা কি করে ভুলতে পারি? এটি যেমন রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ কমায় ঠিক তেমনি ভাবেই রক্ত পরিষ্কার করতেও যথেষ্ট কার্যকরী। প্রতিদিন খালি পেটে সকালে করলার রস পান করা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অত্যন্ত কার্যকর।
  • দুধ ও দুগ্ধজাত খাবারঃ দই, ছানা পনির, এর মত দুগ্ধ জাত খাবার আপনাকে অনেক বেশি সাহায্য করবে ডায়াবেটিস এর প্রতিরোধক হিসেবে।
  • আমিষ জাতীয় খাদ্যঃ প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের জন্য আটগ্রাম করে আমিষ খাওয়া অবশ্যই উচিত।
  • চর্বি জাতীয় খাদ্যঃ দৈনন্দর প্রয়োজনীয় ক্যালোরি এর ২০ থেকে ২৫ ভাগ চর্বি থেকে আসা ভালো। খাঁটি তেল, ঘি, ক্ষতিকারক চর্বি ছাড়া মাখন, ডিম ইত্যাদি হতে পারে এর উৎস।
  • শর্করা জাতীয় খাদ্যঃ মানবদেহের প্রয়োজনীয় মোট শক্তির ৫৫ থেকে ৬০ ভাগ আসতে হবে শর্করা থেকে। যেমনটা পূর্বে বলা হয়েছে এর প্রধান উৎস হতে পারে ভাত, রুটি, ডাল, শিম, সবুজ-শাকসবজি ইত্যাদি।

ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা ফল

কালোজাম, লেবু, আমড়া, বাতাবি লেবু ,কামরাঙ্গা,বাঙ্গি, জামরুল, আমলকি কচি, ডাবের পানি, মাঝারি আপেল, কমলা, নাশপাতি অর্ধেক, ছোট কলা, চেরি ফল, তরমুজ ইত্যাদি

ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা সবজি

আলু, গাজর, মটরশুঁটি, ভুট্টা, শালগম, বিট, কাঁচকলা, কলার থোড়, করলা, মিষ্টিকুমড়া, মিষ্টি আলু ,পালং শাক, লাল শাক, পুঁই শাক, কলমি শাক, ডাঁটা শাক, কচু শাক, লাউ শাক, কুমড়ো শাক, পাট শাক, হেলেঞ্চা শাক, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা, ওলকপি, টমেটো, কাঁচা পেঁপেঁ, শশা, খিরা, উচ্ছে, করলা, ঝিঙা, ধুন্ধল, চাল কুমড়া, ডাঁটা, লাউ, সজনে, বেগুন, মরিচ, কলার মোচা ইত্যাদি।

ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার তালিকা - ডায়াবেটিস রোগীদের যা যা খাওয়া যাবেনা

শরীরকে ডায়াবেটিস নামক নীরব ঘাতক থেকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে কিছু খাবার অবশ্যই আপনাকে এড়িয়ে চলতে হবে তা না হলে এটি আপনার ক্ষতিসাধন করবে। চলুন জেনে নেওয়া যাক এমন কিছু খাবার সম্পর্কে যা ডায়াবেটিসের প্রভাব বৃদ্ধি করে আমাদের শরীরে নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করে।
  • আপনাকে অবশ্যই অতিরিক্ত চর্বি লবণ কিংবা চিনি সমৃদ্ধ খাবার এড়িয়ে চলতে হবে যতটা সম্ভব।
  • ফাস্টফুড, চিপস, চকলেট, কেক, আইসক্রিম, মাখন ও অতিরিক্ত চিনিওয়ালা পানীয়তে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি রয়েছে যার রক্তে সুগারের পরিমাণ বৃদ্ধি করে সুতরাং এগুলো এড়িয়ে চলাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
  • ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অত্যাধিক শর্করা জাতীয় খাবার নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
  • কিসমিস খেলে ডায়াবেটিস আরো বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এটি শরীরের ওজন ও বৃদ্ধি করে এর ফলে স্থুলতা জনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে তাই অবশ্যই এটি এড়িয়ে চলতে হবে।
  • যে সকল খাদ্যে স্থুলতার উপর কিংবা ওজন বৃদ্ধির উপর প্রভাব ফেলে যেমন অতিরিক্ত তেল চর্বিযুক্ত কিংবা ভাজাপোড়া ইত্যাদি সংক্রান্ত খাবার গুলো এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে।

তাড়াতাড়ি ডায়াবেটিস কমানোর উপায়

ডায়াবেটিস অনেকাংশে আমাদের জেনেটিক ও দৈনন্দন জীবনযাত্রার দ্বারা প্রভাবিত হলেও একটু সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ও সতর্কতা অবলম্বনে দ্বারা এই রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। আমরা চেষ্টা করলেই আমাদের রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারি। ডায়াবেটিস তাড়াতাড়ি কমানোর জন্য নানা রকম স্বাস্থ্যকর ফল, সবুজ শাকসবজি, চর্বিহীন আমিষ, এবং স্বাস্থ্যকর চর্বি খাওয়া প্রয়োজন কারণ শরীরে চর্বির ও প্রয়োজনীয়তা রয়েছে এর মাত্রা অতিরিক্ত হলে কমে গেলে অন্যান্য শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাছাড়াও বিভিন্ন প্যাকেট জাত ও প্রক্রিয়াজাতকরণ খাবার কোমল পানীয়, চিনিযুক্ত খাবার, মিষ্টি ইত্যাদি একদম এড়িয়ে চলতে হবে এর পাশাপাশি ডায়াবেটিস দ্রুত নিয়ন্ত্রণের জন্য মনোযোগ দিতে হবে শরীর চর্চার দিকে। এছাড়াওঃ
  • খাদ্যাভাস পরিবর্তনের মাধ্যমেঃ একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস মেনে চলার মাধ্যমে এই রোগ প্রতিরোধ করা অনেকাংশেই সম্ভব। বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাতকরণ কিংবা প্যাকেট জাত খাবার যেমন চিপস, বিস্কুট, কোল্ড ড্রিংকস,ও ফাস্টফুড আইটেম যেমনঃ বার্গার,পাস্তা,প্যাস্ট্রি, ইত্যাদি খাদ্য কম খাওয়া সাথেচিনি জাতীয় খাবার পরিমাণে কম খাওয়া, মিষ্টি কম খাওয়া ডায়াবেটিস প্রতিরোধে কার্যকরী হতে পারে। এর বদলে স্বাস্থ্যকর শাকসবজি ফল বাদাম ইত্যাদি খাওয়া ভালো।
  • শরীরচর্চাঃ একটু সুস্থ দেহের অধিকারী হতে হলে প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে আড়াই ঘন্টা ব্যায়াম করা দরকার। দ্রুত হাঁটা, সিঁড়ি বেয়ে উপরে ওঠা নামা করা, সময় পেলে সাঁতার কাটা এ ধরনের কার্যক্রমে যুক্ত থাকলে শরীর থাকে সক্রিয়। তাছাড়াও শরীরে ওজন কম থাকে এবং সিড়ির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।
  • ধূমপান ত্যাগ করাঃ এটি একটি বদভ্যাস আমাদের সকলের জানা এবং তার সাথে আমরা এও জানি এটি অনেক বিরল রোগের সূচক এবং অনেকাংশে শরীরকে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত করতে হলে সাহায্য করতে পারে সুতরাং এই অভ্যাস থাকলে তা ত্যাগ করাই শ্রেয়।
  • রক্তে চিনির মাত্রায় নজরদারিঃ যে সকল ব্যক্তি ডায়াবেটিস রোগ সংক্রান্ত ঝুঁকিতে রয়েছেন তাদের উচিত নির্দিষ্ট সময় পর পর ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা। বর্তমান সময়ে অনেক ফার্মেসিতেই স্বল্পমূল্যে ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা সম্ভব।
  • ডাক্তারের পরামর্শঃ ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়লে কিংবা হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।
এই রোগ প্রতিরোধে স্বাস্থ্যকর ও শৃংখল জীবনযাপনের কোন বিকল্প নেই।

ওষুধ ছাড়াই ডায়াবেটিস কমানোর উপায়

ওষুধ ও ইনসুলিন ব্যতীত প্রাকৃতিক উপাদানের সাহায্যেও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। সুস্বাস্থ্যকর জীবন যাপন শরীরচর্চা,সঠিক খাদ্যাভ্যাস ইত্যাদি ছাড়াও নিম্নলিখিত প্রাকৃতিক উপাদান গুলো ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে।
  • ডিমঃশরীরে শর্করার মাত্রা ঠিক রাখতে ডিম হতে পারে অনেক উপযোগী। আর এক্ষেত্রে সিদ্ধ ডিম খাওয়াটা বেশি উপকারী।
  • ডুমুরঃ ডুমুরে ফাইবার নামক উপাদান বেশি থাকে ফাইবার ডিমের মতো রক্তে শর্করা পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ রাখতে সহায়তা করে।  এছাড়াও বিশেষজ্ঞদের মতে ডুমুর এর পাতা ইনসুলিন প্রতিরোধের উন্নতি ঘটাতেও যথেষ্ট কার্যকরী।
  • টক দইঃ যেহেতু শরীরে অতিরিক্ত ওজনের কারণে ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে সে ক্ষেত্রে টক দই উপকারী কারণ টক দই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে বা কমাতে সাহায্য করে এবং এটি রক্তে শর্করার মাত্রা ঠিক রাখতেও সাহায্য করে।
  • ব্রকোলিঃ ব্রকোলি তে কার্বোহাইড্রেট এর পরিমাণ একদমই নেই এটি ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগ হতে আপনার দেহকে সুরক্ষা প্রদান করবে।
  • তেতো করোলাঃ তেতো করোলা রক্তে গ্লুকোজ এর পরিমাণ কমায় যেহেতু রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে গেলে ডায়াবেটিস দেখা দেয় সুতরাং বুঝা যাচ্ছে করোলা কতটা কার্যকরী।প্রতিদিন খালি পেটে সকালের রস পান করলে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি ভালো কাজ করে।
  • মেথিঃ মেথি সাধারণত মানবদেহের রক্তে গ্লুকোজ সহনশীল করতে সাহায্য করে এবং এর সাথে দেহে সরকারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে এটি যথেষ্ট কার্যকরী।
  • নিম পাতাঃ নিম পাতার কার্যকারিতা এক্ষেত্রে এত বেশি যে নিম পাতা কে ডায়াবেটিসের ঔষধ হিসেবেও গণ্য করা হয়।নিম পাতা ইনসুলিন উৎপাদনকারী কোষ কে সুস্থ করতে সাহায্য করে তাছাড়ো আমাদের দেহে ইনসুলিন ও রক্তে সুগারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণেও অনেক উপযোগী।

ডায়াবেটিস এর স্বাভাবিক মাত্রা

সাধারণত দুইটি উপায় ডায়াবেটিস মাপা হয়ে থাকে এখন আপনার রক্তে সুগারের পরিমাণ নির্ভর করে আপনি কোন উপায়ে ডায়াবেটিস মাপছেন। তা যদি হয় গ্লুকোমিটারে ( যা বাসা বাড়িতে কিংবা ফার্মেসিতে ব্যবৃত হয়) তাহলে সেক্ষেত্রে তাহলে আপনার দেহে খালি পেট এ সুগার এর পরিমাণ ৪-৬ পয়েন্ট (mmol/l) এবং খাবার এর ২ ঘন্টা পরে মূলত তা আট পয়েন্টের নিচে হলে সে মাত্রা কে সুগারের স্বাভাবিক মাত্রা হিসেবে গণ্য করা হয়।

অন্যদিকে হাসপাতাল ল্যাবে ডায়াবেটিস মাপলে খালিপেটে আপনার শিরা থেকে নেওয়া রক্তে সুগারের পরিমাণ ৫.৫ (mmol/l) এর আশেপাশে থাকা ভালো।ভরা পেটের ক্ষেত্রে খাবার পরে শরীরের সুগারের মাত্রা কিছুটা বেড়ে যায় স্বাভাবিক তবে এই মাত্রার পরিমাণ ৭.৮ (mmol/l) এর বেশি হলে তাকে প্রি ডায়বেটিস হিসেবে গণ্য করা হয়। 

টাইপ ২ ডায়াবেটিস হওয়ার উচ্চ ঝুঁকি সৃষ্টি হলে তখন তাকে প্রি-ডায়াবেটিস স্টেজ বলে।আর রক্তে সুগার এর মাত্রা ১১.১ এর বেশি হলে তার ডায়াবেটিসের মাত্রায় চলে যায়।

আমাদের শেষ কথা

"ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা" সম্পর্কিত আজকের প্রবন্ধে আমরা চেষ্টা করেছি এমন সকল খাবার এর তথ্য তুলে ধরার যার মাধ্যমে ডায়াবেটিসের সাথে লড়াই করা কিংবা এটি প্রতিরোধ করা একটু সহজ হবে। এটি এমন একটি রোগ যা নীরবে আপনার শরীরে বাসা বেঁধে ক্ষতি সাধন করার জন্য যথেষ্ট। আমাদের চারপাশে নজর দিলেই আমরা এরকম অসংখ্য মানুষকে দেখতে পাবো যারা এই রোগের জন্য অনেক কষ্টকর পরিস্থিতির শিকার হয়ে রয়েছেন। 

যেহেতু প্রতিকারের থেকে প্রতিরোধ শ্রেয় অতএব অবশ্যই আমাদের সচেতনতা পূর্ব থেকে অবলম্বন করতে হবে যেন আমাদের কিংবা আমাদের প্রিয়জনের শরীরে এই ধরনের নীরব ঘাতক বাসা না বাঁধে। এই ধরনের রোগের ভুক্তভোগী হলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া অত্যাবশ্যক। সর্বোপরি আশা করি প্রবন্ধটি আপনাদের জন্য উপকারী বিবেচিত হবে। সকলেই সুস্থ থাকবেন এবং সচেতন থাকবেন ধন্যবাদ সকলকেই।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ইজি গ্রাব ওয়েব এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url