দাঁতের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায় - দাঁত ব্যথা হলে করণীয়
বাতের ব্যথা দূর করার জাদুকরি উপায়দাঁতের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায় আজকে আমাদের প্রবন্ধের আলোচনার বিষয়বস্তু। সুন্দর হাসির জন্য থাকা চাই সুন্দর এবং সুস্বাস্থ্যকর রোগমুক্ত দাঁত। এর পাশাপাশি সঠিকভাবে খাদ্য গ্রহণের জন্য রোগমুক্ত এবং স্বাস্থ্যকর দাঁত অপরিহার্য। কখনো এই দাঁতের সংক্রমণজনিত কিংবা অন্য কোন কারণে ব্যথার সৃষ্টি হলে তা অসহনীও হয় এবং আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে অস্বস্তিকর করে তুলে। সুতরাং অবশ্যই এটি অবহেলা করার কোন বিষয় নয়।
আজকের প্রবন্ধে আমরা দাঁতের ব্যথার কারণ, ঘরোয়া চিকিৎসা, ব্যথা নিরময়ের ঔষধ,দাঁতের মাড়ি ফোলার চিকিৎসা সহ আনুষঙ্গিক বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করব। আশা করছি প্রবন্ধটি আপনাদের উপকারে আসবে।
দাঁতের ব্যথা কেন হয়
বিশেষজ্ঞদের মতে আমাদের সকল রোগের উৎপত্তিস্থল হলো মুখ গহ্বর। যেহেতু মুখ দিয়ে সকল খাবার আমাদের দেহে পৌঁছায় সেহেতু অবশ্যই এর অভ্যন্তরীণ যত্নের বিষয়টি লক্ষ্য রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সাধারণত দাঁতের ব্যথাকে অনেকে আমলই দেই না প্রয়োজন মত দাঁতের যত্ন পর্যন্ত নেই না যার ফলে জীবাণু সংক্রমণ বেশি হয় এবং এর ফলের সৃষ্টি হয় দাঁত ও মাড়ির তীব্র ব্যথা সহ নানান ধরনের জটিল সমস্যা। দাঁতের ব্যথার সাধারণ কারণ গুলোর মধ্যে রয়েছে মজ্জায় প্রদাহ, দাঁতে ক্ষয় হয়ে যাওয়া, ডেন্টাল ট্রমা এবং এর পাশাপাশি ছোট ক্যাভিটি হওয়া আঞ্চলিক ভাষায় যাকে দাঁতে পোকা লাগা বলা হয়ে থাকে।
এছাড়াও তীব্র দাঁত ব্যথার অন্য কিছু কারণগুলো হলো দাঁতের ফোড়া কিংবা পুঁজ জমে যাওয়া, দাঁত তোলা সম্ভাব্য জটিলতা জনিত ব্যথা, মাড়ির বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ ইত্যাদি।সাধারণত দাঁতে যদি পোকা লাগে তাহলে অবশ্যই দাঁতের ভিতরে মজ্জাকে আঘাত করার পূর্বেই এর চিকিৎসা করে নেওয়া অত্যন্ত জরুরী। যাতে ক্যাভিটি কিংবা পোকা লাগলে অনেক সময় দেখা যায় কিছু খেতে গেলে ব্যথা করছে এবং খাওয়া শেষ হয়ে গেলে আর ব্যাথা থাকে না।
আরও পড়ুনঃ তীব্র মাথা ব্যথা কমানোর উপায়
এছাড়া মিষ্টি কিনবা ঠান্ডা জাতীয় কিছু খেলে শির শির ব্যথা অনুভূত হয় এক্ষেত্রে চিকিৎসকের কাছে গেলেই তারা উপযুক্ত ফিলিং ব্যবহার করলে দাঁতের এরকম ব্যথা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব হয় কিন্তু আমরা অনেকেই প্রাথমিক অবস্থায় এটি গুরুত্ব দেই না বরং ফেলে রাখি যার ফলে গর্তটি আরো বেশি বড় হয় এবং যখন দাঁতের মজ্জায় আঘাত করে তখন অসহনীয় ব্যথা অনুভূত হয় এবং এই পর্যায়ে এসে কোন ওষুধও সঠিকভাবে কাজ করে না আর এরকম অবস্থাকে পালপাইটিস হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়।
এই অবস্থায় চিকিৎসকদের কাছে রুট ক্যানেল করায় একমাত্র পন্থা রয়ে যায় এবং এতেও এই সমস্যার সমাধান না হলে তখন দাঁত তুলে ফেলতে হয়। এছাড়াও আক্কেল দাঁতের জন্য ব্যথা অনুভূত হতে পারে । আক্কেল দাঁত সঠিকভাবে না ওঠা আঁকাবাঁকা ভাবে ওঠা কিংবা সেখানে ইনফেকশন এর দেখা দেওয়া তীব্র দাঁত ব্যথার অন্যতম কারণ হতে পারে। এছাড়াও ওরাল ক্যাভিটির বিভিন্ন ধরনের ইনফেকশন, আলসার ইত্যাদির কারণে দাঁতের ব্যথা হতে পারে।
দাঁতের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায়-দাঁত ব্যথার ঘরোয়া চিকিৎসা
দাঁতের ব্যথা অস্বস্তিকর এবং অত্যন্ত বেদনাদায়ক একটি পরিস্থিতির সৃষ্টি করে যার এবং যত দ্রুত সম্ভব ভুক্তভোগী এর থেকে পরিত্রাণ পেতে চাই যদিও দাঁতের ব্যথার জন্য বিভিন্ন ধরনের বেদনাশক ঔষধ রয়েছে তার পরেও আপনি চাইলে কিছু ঘরোয়া উপায় অবলম্বনের মাধ্যমে দাঁতের ব্যথা হতে অনেক তাড়াতাড়ি পরিত্রাণ পেতে পারবেনঃ
আরও পড়ুনঃ চুল পড়ার কারণ ও চুল পড়া বন্ধ করার উপায়
- আলুঃ আলু অত্যন্ত সুস্বাদু একটি সবজি কিন্তু এর বাইরেও আলুর দাঁত ব্যথার টোটকা হিসেবে ভালো কাজ করে আলু কেটে দাঁতের যে স্থানে ব্যথা করছে সেখানে চেপে রাখুন দেখবেন ব্যথা কমে গেছে।
- লবঙ্গঃ লবঙ্গর পুষ্টিগুণাগুণ কম বেশি আমাদের সবারই জানা। লবঙ্গের সাথে গোলমরিচ মিশিয়ে এর পেস্ট তৈরি করে দাঁতের এখন মিনিট কয়েক কিছুদিন এই পদ্ধতি অবলম্বন করলে ফল হাতে নাতে পাবেন।
- লবণঃ দাঁতের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায় গুলোর ভিতরে অন্যতম হলো এই লবণ যা দাঁতের কোন ধরনের ইনফেকশন কিংবা সংক্রমণ সাড়াতে অত্যন্ত বেশি কার্যকরী। এক গ্লাস খুব গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে তারপর সেই পানি দিয়ে কুলি করুন। দাঁতের তীব্র ব্যথা অবস্থায় এই পদ্ধতি যদি তিন থেকে চার বার অবলম্বন করেন তাহলে দেখবেন দাঁতের ব্যথা হতে পরিত্রান পেতে আপনি সক্ষম।
- রসুনঃ রসুন বহুগুণে ভরপুর একটি ভেষজ এবং এর স্বাস্থ্য উপকারিতা অনেক বেশি। দাঁতের ব্যথা কমাতে চাইলে আপনি রসুন চিবিয়ে খেতে পারেন তবে যদি রসুন চিবিয়ে খেতে কষ্ট হয় সেক্ষেত্রে দাঁতের যে অংশে ব্যথা করছে সে অংশ চাইলে চেপে ধরে রাখতে পারেন।
- পেঁয়াজঃ পেঁয়াজের ভিতর অ্যান্টিসেপটিক, অ্যন্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যন্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান বিদ্যমান। পেঁয়াজ চিপে খেতে অনেকের ভালো নাও লাগতে পারে সে ক্ষেত্রে ভালো হবে আপনি যদি পেঁয়াজের কোয়া নিয়ে আক্রান্ত দাঁতে কিছুক্ষণের জন্য রেখে দিন দিনে ২ থেকে ৩ বার এভাবে করলে দাঁতের ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
- গোলমরিচ ও লবনঃ গোলমরিচ এবং এর সাথে লবণ মিশিয়ে ব্যবহার করলে দাঁতের ব্যথা কমতে অনেকটাই সহযোগিতা হয়। এ দুটির ভিতরই ব্যাকটেরিয়া বিরোধী এবং প্রদাহরোধী উপাদান বিদ্যমান যা দাঁতের ব্যাথা সারিয়ে তুলতে অনেক বেশি সহায়ক হবে।সমপরিমাণ গোলমরিচ এবং লবণ নিন এবং এর সাথে কয়েক ফোঁটা পানি মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। আক্রান্ত দাঁতে পেস্ট লাগান এবং কয়েক মিনিট রাখুন।
- লবনও গরম পানিঃ এক গ্লাস গরম পানিতে আধা চা চামচ লবন মিশন এবং এরপরে একটি কুল্কুলা করুন আপনার ফোলা এবং প্রদাহ কমাতে এটি যাদুর মত কাজ করবে।
- লবণ এবং সরিষার তেলঃ এক টেবিল চামুচ লবণ এবং এর সাথে অল্প পরিমাণ সরিষার তেল ও লেবুর রস মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে মাড়িতে ম্যাসাজ করুন কিছুক্ষণ এর পরবর্তী সময়ে কুসুম গরম পানি দিয়ে কুলি করে তা দিয়ে ধুয়ে ফেলুন এভাবে ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস হবে।
- অ্যালোভেরাঃ অ্যালোভেরায় রয়েছে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান যা দাঁতের জীবাণুকে সম্পূর্ণরূপে নষ্ট করে দেয়। এর জেল ব্যবহার করে আপনি ব্যথার স্থানে লাগাতে পারেন।
- আদাঃ আদা দাঁতের ব্যথা নিবারনের ক্ষেত্রে অত্যন্ত কার্যকর। এক টুকরো আদা কেটে নিয়ে যে দাঁতে ব্যথা করছে সেই দাগ দিয়ে চিবতে থাকুন। কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখবেন ব্যথা দূর হয়ে গেছে।
দাঁতের মাড়ি ফোলা ও ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায়
দাঁত ও মাড়ির ব্যথার মত বেদনাদায়ক পরিস্থিতির শিকার হননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার। দাঁতের চেয়েও দাঁতের মাড়িতে ব্যাথা হওয়া কিংবা ফোলা ভাব হওয়া বেশি কষ্টের। এটা সাধারণত মানের একটি সংক্রমণজনিত রোগ। আপনি যদি আপনার দাঁতের সঠিক যত্ন না নেন সে ক্ষেত্রে দেখা যাবে দাঁতের উপর প্লাক একটি স্তর পড়ে যায় এবং দীর্ঘদিন এটি থাকার ফলে মাড়িতে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে যার ফলে বাড়িতে অনুভূত হয় তীব্র ব্যথা এবং দেখা দেয় মাড়িতে ফোলা ভাব। চলুন দেখে নেওয়া যাক দাঁতের মাড়ি ফোলা এবং ব্যাথা কমানোর ঘরোয়া কিছু টোটকা।
- লেমন গ্রাস তেলঃ দাঁতের ক্ষয় এবং মাড়ির রোগের ঝুঁকি কমাতে আপনি ভরসা রাখতে পারেন লেমন গ্রাস তেলের উপরে। এই তেলটিতে অ্যাস্ট্রিঞ্জেন্ট নামক উপাদান বিদ্যমান থাকার ফলে মাড়ি ফেলা জনিত প্রদাহ দূর করতে এটি অত্যন্ত বেশি কার্যকর। এক কাপ জলে প্রথমত কয়েক ফোঁটা লেমন গ্রাস তেল মিশিয়ে নিন এবং এই মিশ্রণটি দিয়ে কিছুক্ষণ কুল কুলা করুন। নিয়মিত দুই থেকে তিনবার এই উপকরণটি ব্যবহার করার মাধ্যমে আপনি আশানুরূপ ফল পেতে পারেন।
- হলুদঃ হলুদ অত্যন্ত গুণ সম্পন্ন একটি ভেষজ আমাদের সকলেরই জানা। হলুদে কারকিউমান রয়েছে যা কিনা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি- ইনফ্লামাটরি উপাদানসমৃদ্ধ এবং এই উপাদানগুলো সাধারণত ব্যথা ও ফোলা ভাবে কমাতে অনেক বেশি কার্যকর। এছাড়াও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ রুখে দিতে এটি যথেষ্ট কার্যকরী। সামান্য পানির সাথে ১/২ চামচ হলুদের গুড়া মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিতে হবে এবং তা মিনিট পাঁচ এক এর মত রেখে আক্রান্ত মাড়িতে আলতো ভাবে মালিশ করে গরম পানি দিয়ে কুলকুলা করে ধুয়ে ফেলতে হবে।
- জোয়ানঃ জোয়ানে থাইমল রয়েছে যা কিনা অ্যাব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল হিসেবে কাজ করে। এটি ব্যবহারের জন্য প্রথমত আপনাকে জোয়ানের বীজ হালকা টানতে হবে যেন সুগন্ধ বের হয় এবং এরপর এটি গুঁড়ো করে নিতে হবে। সরিষার তেলের সাথে জোয়ানের এই গুরু মিশ্রণটি মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন এবং তা মাটির উপরে লাগান। ১০ মিনিটের মত অপেক্ষা করে তা ভালোমতো ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন এটি জাদুর মত কাজ করছে।
- লবণ পানিঃ মাড়ির ফোলা ভাব দূর করনের ক্ষেত্রে লবণ পানি হতে পারে চমৎকার একটি ঘরোয়া উপাদান। এটি যেমন মুখের ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ কার্যকর ঠিক তেমনিভাবে মাড়ির যে কোন সংক্রমনের সাথেও এটি লড়াই করে থাকে। টুথব্রাশ দিয়ে দাঁত ভালো করে ব্রাশ করার পর কয়েক সেকেন্ড লবন লাগিয়ে ঘষুন এবং এরপরে হালকা গরম পানি দিয়ে কুলি করে ধুয়ে ফেলুন।
- লেবু পানিঃ লেবু পানির ভিতরে কার্যকরী প্রদাহরোধী উপাদান বিদ্যমান থাকে। এর পাশাপাশি লেবুর মধ্যে রয়েছে পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন-এ এর মত উপাদান যা মাড়ির পোলার সমস্যা দূরীকরণের জন্য উপকারী। এক গ্লাস গরম পানির মধ্যে লেবুর রস মিশিয়ে ভালোভাবে মুখে নিয়ে কুলকুলা করলেই আপনি অল্প সময়ে এর প্রভাব টের পাবেন।
- অ্যালোভেরা জেলঃ অ্যান্টি- মাইক্রোবিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান সমৃদ্ধ অ্যালোভেরা জেল মাড়ির ফোলা ভাব কমাতে এবং এর তীব্র ব্যথা দূরীকরণের ক্ষেত্রে দারুণ কাজ করে। প্রথমত একটি পাত্রে দুই থেকে তিন চামচ এলোভেরা জেল ভালো করে ফুটিয়ে মাড়িতে লাগান এবং এর পরে ১০ মিনিট সময় অতিবাহিত হওয়ার পর তা কুলকুলা করে ধুয়ে ফেলুন।
- টি ব্যাগঃ দেখে বোঝার উপায় না থাকলেও বিবেগে রয়েছে মাড়ির প্রদাহ কমানোর মত ক্ষমতা। লিকার চাইল্ডটি ব্যাগে থাকা ট্যানিন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান সমৃদ্ধ যা মুখের ভেতরের সুস্থতা বজায় রাখতে সহায়তা করে।
- তিলের তেলঃ মাড়ির ব্যাথা দূরীকরনের ক্ষেত্রে এবং ফোলা ভাব কমাতে অত্যন্ত কার্যকর এই ঘরোয়া উপাদানটি। প্রথমত এক চামচ তিলের তেল মুখে নিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এই সনাতন আয়ুর্বেদিক পদ্ধতি মুখের ভেতরের ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ কমাতে অনেক বেশি সহায়ক বলে প্রমাণিত।
- গরম সেঁকঃ অত্যন্ত কার্যকরী এই ঘরোয়া টোটকা সম্পর্ক নিয়ে না বললেই নয়। মাড়ির ব্যথা কমানোর ক্ষেত্রে অত্যন্ত সহায়ক উপায় হল সেঁক দেওয়া। প্রথমত গরম পানিতে একটি পরিষ্কার কাপড় ভিজিয়ে বাড়তি পানি চেপে বের করে দিন এবং কাপড়টিকে ভাঁজ করে গালের যেই মাড়ির অংশে ব্যাথা অনুভূত হচ্ছে সেইখানে রাখুন। তবে গরম পানি যেন সহনীয় হয় সে ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে। এটি আপনার মাড়ির ফোলা ভাব কমাতে এবং ব্যথা নিরাময়ের কার্যকর প্রভাব ফেলবে।
- নারিকেল তেলঃ নারিকেল তেল লরিক এসিডে পরিপূর্ণ। এই তেলে শক্তিশালী অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। নিয়মিত এটি ব্যবহারের ফলে দূর হবে মাড়িজনিত সকল সংক্রমণ। মুখে প্রায় দুই চা চামচ নারিকেল তেল নিন এবং প্রায় ২০ মিনিটের জন্য মুখের চারপাশে তেলটি ভালো করে ঘষুন। এবং পরবর্তী সময় মুখে জল নিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন এর কার্যকারিতা আপনাকে মুগ্ধ করছে।
দাঁত ব্যথার ট্যাবলেট এর নাম
দাঁতের ব্যথা কমানোর ওষুধ খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই আপনাকে জেনে নিতে হবে এর নির্দিষ্ট কারণ এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী মেডিসিন কিংবা ওষুধ গ্রহণ করতে হবে। বাজারে দাঁত ব্যাথা নিরাময়ের জন্য অনেক রকমের ঔষুধ পাওয়া যায়। তবে আপনার যদি দাঁতের হালকা রকমের ব্যথা অনুভূত হয় সে ক্ষেত্রে প্যারাসিটামল খেলেই চলে এবং এটি ভালো ফলাফলও দেয় ব্যথা যদি তীব্র হয় সে ক্ষেত্রে দাঁতের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে শরণাপন্ন হওয়া সব থেকে ভালো উপায়। কিছু কার্যকরী দাঁতের ব্যথার ওষুধের নাম হলোঃ
আরও পড়ুনঃ মানসিক দুশ্চিন্তা দূর করার উপায় কি?
তীব্র দাঁতের ব্যথা অনুভূত হলে আপনি Etoricoxib 60 mg / Etoricoxib 90mg / Etoricoxib 120mg / এই ওষুধগুলো খেতে পারেন। দাঁতের ব্যথার তীব্রতার উপর ভিত্তি করে মাত্রা বাড়ানো যেতে পারে। Etorix,Etocox,Tory,Fabetor এই ব্র্যান্ডগুলোই সাধারণত উপরোক্ত ওষুধগুলো বাংলাদেশের কোম্পানিতে তৈরি করে।
- Fenamic 500 - দাঁত ব্যথা উপশমের জন্য অত্যন্ত কার্যকরী একটি ট্যাবলেট।
- Napa one - এই ট্যাবলেটটি দ্রুত ব্যথা নিরাময় করতে পারে। ভুক্তভোগী যদি ১৮ বছরের নিচে হয় তাহলে এই ট্যাবলেটটি অর্ধেক করে দুই থেকে তিনবার খাওয়া যেতে পারে।
- Fanamic 250 - প্রাপ্তবয়স্ক রোগীদের জন্য দিনে দুই থেকে তিনবার পরপর তিন দিন এবং ব্যথা থেকে গেলে পাঁচ দিন অবধি এই ট্যাবলেট খাওয়া যেতে পারে।
এছাড়াও দাঁতের ব্যথা নিরাময়ে আরো কিছু ট্যাবলেট হলোঃ
- Tory60
- Etoricoxib 60mg
- Paracetamol
- Exilok 20
- Cox-E 120mg
- Torimon 90mg
- Aroxia 12p mg
- Algirex 120mg
দাঁতের ব্যথা কমানোর হোমিওপ্যাথি ওষুধ
দাঁত ব্যথার কার্যকরী সমাধান এর ক্ষেত্রে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা যথেষ্ট এগিয়ে। হোমিওপ্যাথি ওষুধ দাঁতের রোগে মন্ত্রের মতো কাজ করে এবং এটি দ্বারা দাঁতের ক্ষয় প্রতিরোধ করাও সম্ভব। চলুন জেনে নেওয়া যাক এমনই কিছু হোমিওপ্যাথি ঔষধ এর সম্পর্কেঃ
- Cal Flour -200 দাঁত মাজার সহিত কোন বস্তু দাঁতে লাগলেই যখন দাঁতে যন্ত্রনা বৃদ্ধি পায় কিন্তু দাতে শিথিলতা বশত নড়ে যাওয়া দাঁতে ব্যাথা, দাঁতের মাড়ী ফোলা,অল্প নড়া দাঁতে ব্যাথা, মাড়ীতে ঘা, নড়া দাঁতে খাদ্য দ্রব্য লাগিলে ব্যথা বাড়ে এইরকম পরিস্থিতিতে পায়োরিয়ায় ক্যালকেরিয়া ফ্লোরে এই সকল বে বেদনাদায়ক রোগ গুলো আরোগ্য হয়।
- মার্ক সল 200 (Merc Sol), ক্যাল্কে কার্ব 200(Calcarea Carb) , ম্যাগ কার্ব 200 (Mag Carb), সাইলেসিয়া 200 (Silicea) আক্কেল দাঁত উঠার সময় ব্যথা অনুভূত হলে এই হোমিওপ্যাথি ওষুধগুলো ব্যথা নিরাময়ের ক্ষেত্রে আপনাকে সাহায্য করবে।
- Calendula Q, Belladonna Q, Kreosotum Q, Plantago Q , এর মতো হোমিওপ্যাথি ওষুধ দাতের ব্যথা নিরাময়ের ক্ষেত্রে অনেক বেশি কার্যকর।
- ক্যামোমিলা - Chamomilla 6/30 তীব্র দাঁতের যন্ত্রণায় আপনাকে সহায়তা করবে।
- Thuja (থুজা) দাঁতের গোড়ার দিকে ক্ষয় হয়ে গেলে সেই এই ক্ষত সারতে সহায়তা করবে।
দাঁত ব্যথা দূর করার দোয়া
মানুষের শরীরে যে সকল ধরনের ব্যথা অনুভূত হয় তাদের মধ্যে দাঁতের ব্যথা সব থেকে বেশি বেদনাদায়ক। দাঁতের ব্যথার চিকিৎসা এবং ঘরোয়া উপশম সহ কুরআন সুন্নাহর আমলেও দাঁতের ব্যথা উপশম হয়। দাঁতের ব্যথা হতে মুক্তি লাভ করার জন্য কুরআনে একটি আমলও রয়েছে। যা হলোঃ
উচ্চারণঃ কুল হুয়াল্লাজি আংশাআকুম ওয়া ঝাআলালাকুমুস সাম্আ ওয়াল আব্ছারা ওয়াল আফয়িদাতা ক্বালিলাম্মা তাশকুরুন।’ (সুরা মুলক : আয়াত ২৩)
মহান আল্লাহ তা'লার উপর ভরসা স্থাপন করে কেউ যদি পাক-পবিত্র মন থেকে এই দোয়া পাঠ করে তাহলে অবশ্যই তিনি দাঁতের ব্যথা থেকে মুক্তি পাবে ইনশাল্লাহ।
আমাদের শেষ কথা
যেমনটা পূর্বেই বলা হয়েছে সুন্দর হাসির জন্য থাকা চাই সুন্দর, সুস্থ্য ও সবল এবং রোগমুক্ত দাঁত। আর দাঁতকে রোগমুক্ত রাখতে হলে অবশ্যই নিয়মিত মাড়ি ও দাঁতের যত্ম নিতে হবে। তা না হলে আপনার দাঁত ও মাড়ি রোগাক্রান্ত হয়ে পড়বে। বর্তমানে দাঁত ও মাড়ির রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই অবশ্যই এই ধরনের সংক্রমণ গুলো অবহেলা করার মত নয় বরং অতি দ্রুত এর চিকিৎসার ব্যবস্থা করার মাধ্যমে এ ধরনের রোগ নিরাময় করা ব্যবস্থা করতে হবে।
এটি এত বেশি পরিমাণ যন্ত্রণাদায়ক যা আপনি অনুভব না করলে কখনোই বুঝতে পারবেন না। আশা করি উপরোক্ত প্রবন্ধটি আপনাদের জন্য উপযোগী হবে এবং এর পাশাপাশি আপনারা সকলেই দাঁতের যত্নের ক্ষেত্রে আরো বেশি সচেতন হবেন। উপরিক্ত প্রবন্ধে আমরা যে সকল ওষুধের কথা উল্লেখ করেছি তা সেবন করার পূর্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক।
সমস্যা গম্ভীর মনে হলে অবশ্যই সর্বপ্রথম চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। সর্বোপরি সুস্থ থাকবেন, সচেতন থাকবেন।ধন্যবাদ সকলকেই।
ইজি গ্রাব ওয়েব এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url