খালি পেটে কাঁচা ছোলা খাওয়ার উপকারিতা
হানি নাটস এর উপকারিতা অবাক করবে আপনাকেও"খালি পেটে কাঁচা ছোলা খাওয়ার উপকারিতা" সম্বন্ধিত আজকে নিবন্ধে সকল পাঠকদের জানাই স্বাগতম। আপনি যদি নিজেকে সুস্থ এবং স্বাস্থ্যবান রাখতে চান তাহলে অবশ্যই কাঁচা ছোলা আপনাকে অনেক বেশি সাহায্য করতে চলেছে। আমাদের শরীরে সুস্বাস্থ্য গঠনের জন্য ছোলার ভিতরে থাকা পুষ্টি উপাদান সমূহ যথেষ্ট। তাই দৈনিন্দন খাদ্যাভেসে এটি যুক্ত করা আমাদের জন্য অনেক জরুরী।
আজকের নিবন্ধে আমরা কাঁচা ছোলা খাওয়ার উপকারিতা এবং এর সাথে এটি খাওয়ার নিয়ম, পরিমাণ এবং অপরিমিত পরিমাণে খাওয়ার ফলে সৃষ্ট সমস্যা সহ আনুষঙ্গিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চলেছি। আশা করি তথ্য গুলো আপনাদের জন্য উপকারী প্রমাণিত হবে।
কাঁচা ছোলার পুষ্টি গুনাগুন
ছোলা একটি ডাল জাতীয় প্রোটিনের সমৃদ্ধ খাদ্যশস্য। শরীর সুস্বাস্থ্য গঠন করতে এবং তা ধরে রাখতে ছোলা অত্যন্ত সহায়ক। স্বাস্থ্যকর খাবার হিসেবে ছোলা কিংবা বুটের বেশ সুনাম রয়েছে এবং এর গুনাগুন কারোই অজানা নয়। এটি আমিষের একটি উল্লেখযোগ্য উৎস হিসেবে বিবেচিত হয়। ছোলা সাধারনত খাবার পর দ্রুত হজম হয়ে গ্লুকোজ হয়ে রক্তে চলে যায় না যার জন্য ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য ছোলাই থাকা শর্করা অনেক ভালো। শুধু তাই নয় ছোলায় খাদ্য আঁশ ও আছে বেশ যা কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য অনেক উপকারী প্রমাণিত হয়।
আরও পড়ুনঃ আমলকি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
সাধারণত খাবারের আঁশ হজম হয় না এবং একইভাবে খাদ্যনালী অতিক্রম করতে থাকে যার ফলে মলের পরিমাণ বাড়ে এবং তা নরম থাকে এবং এর ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয় ও মলত্যাগ করা সহজ হয়। পরিপাক নিয়মিত এবং সহজ হয় বলে ক্ষতিকর জীবাণু খাদ্যনালীতে থাকতে পারে না ফলে খাদ্য নালীর ক্যান্সার হওয়ার মতো ক্ষতিকারক রোগ থেকে সুরক্ষা প্রদান করে এবং ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
এর পাশাপাশি খাদ্যের আশ রক্তের চর্বি কমাতেও সাহায্য করে। যেহেতু ছোলা দেরীতে হজম হয় তাই এটি দীর্ঘক্ষণ ধরে শরীরের শক্তি যোগান দিতেও সক্ষম। প্রতি ১০০ গ্রাম ছোলায় রয়েছে ১৭ গ্রাম প্রোটিন এবং এর পাশাপাশি ৬৪ গ্রাম শর্করা এবং ৫ গ্রাম ফ্যাট বা তেল। প্রতি ১০০ গ্রাম ছোলায় ক্যালসিয়াম রয়েছে প্রায় ২০০ মিলিগ্রাম, লৌহ ১০ মিলিগ্রাম, ও ভিটামিন-এ ১৯০ মাইক্রোগ্রাম। এ ছাড়াও আছে ভিটামিন বি-১, বি-২, ফসফরাস ও ম্যাগনেশিয়াম । ছোলা তে বিদ্যমান এই সকল উপাদান শরীরের জন্য সবসময়ই প্রয়োজনীয়।
বিশ্বব্যাপী মূলত দুই ধরনের ছোলা পাওয়া যায় দেশী ছোলা ও কাবুলি ছোলা। দেশি ছোলা আমাদের উপমহাদেশে পাওয়া যায় এটি আকারের ছোট এবং একটু গাঢ় রঙের হয়ে থাকে। দেশি ছোলাতে আঁশের পরিমাণ বেশি থাকে। অপর দিকে কাবুলি ছোলা হালকা রঙের এবং মসৃণ ত্বক বিশিষ্ট হয়ে থাকে। কাবুলি ছোলা বিশেষভাবে আফগানিস্তান,উত্তর-আফ্রিকা,দক্ষিণ-ইউরোপ ও চিলিতে চাষ হয়। তবে বর্তমান সময়ে ভারতীয় উপমহাদেশেও এর চাষ হচ্ছে।
খালি পেটে কাঁচা ছোলা খাওয়ার উপকারিতা
ছোলা পুষ্টির দুর্দান্ত একটি উৎস। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ফাইবার ও প্রোটিনের মত পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান। আর কাঁচা ছোলা যদি প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খাওয়া যায় তবে দেখা যাবে আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য বিভিন্ন উপায়ে এটি অনেক উপকারী প্রমাণিত হচ্ছে। চলুন জেনে নেওয়া যাক খালি পেটে কাঁচা ছোলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে।
- রক্তচাপ ও কোলেস্টর নিয়ন্ত্রণঃ ম্যাগনেসিয়াম পটাশিয়াম এর মত খনিজ উপাদান ছোলায় বিদ্যমান থাকে যার ফলে এটি দেহে উচ্চ রক্তচাপ এবং ব্যাড কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে আনে ফলস্বরূপ হার্ট সুস্থ থাকে এবং যারা উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যায় ভুগছেন তাদের এই সমস্যা ও নিরাময় হয়।
- ওজন কমায়ঃ আমাদের ভেতর অনেকেই অতিরিক্ত ওজন কিংবা স্থূলত্বের মত সমস্যায় ভোগেন যা শারীরিক সুস্থতার ক্ষেত্রে বাধা প্রদান করতে পারে। ছোলাই ফ্যাটের পরিমাণ খুব কম থাকে এবং এর পাশাপাশি এটি কম ক্যালোরি যুক্ত একটি খাবার। যার ফলে এটি ওজন কমাতে সহায়তা করে এবং দীর্ঘক্ষণ পেট ভরে রাখে ফলে অতিরিক্ত খেয়ে ফেলার ঝুঁকিও থাকে না।
- স্তন ও ফুসফুস এর ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়ঃ ছোলায় রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কোলন যা স্তন ও ফুসফুসে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমতে সহায়ক।
- হজমে সহায়কঃ হজম প্রক্রিয়ার সহজ করার জন্য অত্যন্ত আবশ্যক একটি উপাদান হলো ভোজ্য আঁশ। আর এই ভোজ্য আঁশ ঘাটতি পূরণের জন্য অনন্য একটি খাবার হলো ছোলা।
- স্বাস্থ্য উজ্জ্বল চুলঃ ছোলা ভিটামিন-এ,বি-৬,জিংক এবং এর পাশাপাশি ম্যাঙ্গানিজ বিদ্যমান। আর এই সকল উপাদানই চুল ভালো রাখতে সহায়তা করে। আপনি যদি নিয়মিত ভেজানো ছোলা খান তাহলে অকালে চুল ঝরে যাওয়ার মত সমস্যা থেকেও পরিত্রান লাভ করতে পারেন।
- হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়ঃ ছোলাতে দ্রবণীয় এবং অদ্রবনীয় উভয় ধরনের খাদ্য আঁশ পাওয়া যায় আর এই খাদ্য আঁশ হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশে কমিয়ে দিতে পারে। ছোলায় যেহেতু ম্যাগনেসিয়াম পটাশিয়াম এবং খনিজের মতো উপাদান বিদ্যমান সেহেতু হার্ট থাকে সুস্থ।
- টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়ঃ খালি পেটে কাঁচা ছোলা খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যায় যার ফলে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি অনেকাংশই কমে।
- হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ায়ঃ আয়রন সমৃদ্ধ কাঁচা ছোলা হিমোগ্লোবিনের মাত্রা উন্নত করতে সহায়তা করে। এর পাশাপাশি যারা অ্যানিমিয়ায় ভুগছেন তাদের জন্য ছোলা অত্যন্ত উপকারী।
- ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করেঃ ভেজানো কাঁচা ছোলায় থাকে কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট,প্রোটিন এবং ফাইবার। যা আমাদের হজম প্রক্রিয়া ধীর করে দেয় এবং শরীরের শর্করা শোষণ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। যার জন্য রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যায় এবং ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকে।
- কফ ভালো রাখেঃ শ্বাসনালীতে জমে থাকা পুরনো কাশি কিংবা কফ ভালো করার জন্য অনেক উপকারী কাঁচা ছোলা।
- অস্থির ভাব দূর করেঃ ছোলায় সাধারণত শর্করার গ্লাইসেমিক ইন্ডেক্স এর পরিমাণ কম থাকে যার কারণে শরীরে প্রবেশ করার পর অস্থির ভাব দূর হয়।
- যৌন শক্তি বৃদ্ধিতেঃ পুরুষ মানুষের পুরুষত্ব বজায় রাখতে এবং যৌন শক্তি বৃদ্ধিতে ছোলা যথেষ্ট ভূমিকা রাখে। খালি পেটে প্রতিদিন ছোলা খেলে যৌন শক্তি অবশ্যই বৃদ্ধি পাবে। আর পাশাপাশি এতে বিদ্যমান আমিষ আমাদের শরীরকে আরো শক্তিশালী ও স্বাস্থ্যবান করতে সহায়তা করে।
- শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিঃ ছোলায় থাকা এন্টিবায়োটিক শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকাংশেই বাড়িয়ে দেয়।
- বার্ধক্যের ছাপ পড়তে দেয় নাঃ ছোলায় ম্যাঙ্গানিজ রয়েছে যা কিনা ফাইন লাইন কিংবা বার্ধকের ছাপ কমাতে অনেক বেশি কার্যকরী। তাই প্রতিনিয়ত খালি পেটে ছোলা খেলে সহজে দূর হবে বার্ধক্যের ছাপ।
কাঁচা ছোলা খেলে কি মোটা হওয়া যায়
যদি আপনার প্রশ্ন থাকে কাঁচা ছোলা খেলে কি মোটা হওয়া যায়? তাহলে এর উত্তর হবে যেহেতু মোটা হওয়ার জন্য শরীরে অতিরিক্ত ক্যালোরি প্রয়োজন পড়ে আর কাঁচা ছোলায় ক্যালোরির পরিমাণ তুলনামূলক কম সেক্ষেত্রে কাঁচা ছোলা মোটা হওয়ার সরাসরি কারণ নয় কিন্তু সঠিক পরিমাণে খেলে এটি শরীরকে সুস্থ রাখার পাশাপাশি ওজন বৃদ্ধিতে সহায়তা করতে পারে। ছোলা মূলত এমন এক ধরনের ডাল জাতীয় খাদ্যশস্য যেখানে ফাইবার,প্রোটিন,ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ প্রচুর পরিমাণে বিদ্যমান থাকে। যা শরীরের সার্বিক স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী।
তবে বেশ কিছু বিষয় অবলম্বন করলে আপনি ছোলা খাওয়ার মাধ্যমেও মোটা হতে পারেন। আপনি যদি আপনার শরীরের চাহিদার চেয়ে বেশি ক্যালরি গ্রহণ করেন তাহলে আপনার ওজন বৃদ্ধি পাবে। কাঁচা ছোলায় প্রতি ১০০ গ্রামে প্রায় ১২০ ক্যালোরি থাকে সুতরাং আপনি যদি আপনার ক্যালরির চাহিদা পূরণের জন্য যথেষ্ট পরিমাণ কাঁচা ছোলা খান তাহলে অবশ্যই আপনার ওজন বৃদ্ধি পাবে। এর পাশাপাশি আপনার দৈনন্দিন খাদ্যাভাসে যদি ইতিমধ্যেই অধিক ক্যালোরিযুক্ত খাবার থাকে তাহলে কাঁচা ছোলা আপনার ওজন বৃদ্ধিতে আরও বেশি পরিমাণে সহায়তা করতে পারবে।
তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে মাথায় রাখতে হবে আপনার খাদ্যাভাসে যদি সুষম খাদ্যের পরিমাণ বেশি থাকে তাহলে সে ক্ষেত্রে কাঁচা ছোলা আপনার ওজন বৃদ্ধিতে তেমন কোনো প্রভাব ফেলবে না। তবে আপনি যদি শরীরচর্চায় অভ্যস্ত হন তাহলে কাঁচা ছোলা আপনার পেশী বৃদ্ধিতে সহায়তা করতে পারে কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন বিদ্যমান থাকে।
প্রতিদিন ছোলা খেলে কি হয়
ছোলার পুষ্টিগুণাগুণ আলোচনা করে শেষ করার মতো নয়। আপনি যদি দৈনন্দিন খাদ্যাভাসে ছোলা যুক্ত করেন তাহলে নিজের স্বাস্থ্যতেই এর প্রমাণ হাতেনাতে পেয়ে যাবেন। অন্যান্য পুষ্টিগুণ সহ আমিষ, ট্রিপটোফ্যান ,কপার এবং আয়রন এর অন্যতম উৎস এটি। তবে আর দশটি পুষ্টিকর খাবারের মতো অবশ্যই এটিও পরিমাণমতো খেতে হবে না হলে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়ে যায়। চলুন আলোকপাত করা যাক প্রতিদিন ছোলা খাওয়ার উপকারী দিকগুলো সম্পর্কে।
- আপনি যদি প্রতিনিয়ত পরিমিত পরিমাণে ছোলা খান তাহলে এটি আপনার খাদ্য নালীতে থাকা ক্ষতিকর জীবাণু দূর করে খাদ্যনালীর ক্যান্সার হওয়ার মতো ক্ষতিকারক রোগ থেকে সুরক্ষা প্রদান করবে।
- ছোলা ভিটামিন-বি সমৃদ্ধ একটি শস্যদানা যা মেরুদন্ডের ব্যথা এবং স্নায়ু দুর্বলতা কমাতে যথেষ্ট কার্যকর।
- ছোলা উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রাখতে ব্যাপক কার্যকরী কারণ এতে ফলিক এসিড রয়েছে।
- প্রতিদিন ছোলা খাওয়ার ফলে পায়ের আর্টারিতে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায়।
- ছোলায় খাদ্য আঁশ রয়েছে যা কিনা কোষ্ঠকাঠিন্যের বিরুদ্ধে অনেক উপকারী প্রমাণিত হয়।
- যেহেতু ছোলা তুলনামূলক দেরিতে হজম হয় তা এটি দীর্ঘক্ষণ ধরে শরীরের শক্তি জোগান দিতেও ব্যাপক ভূমিকা রাখে।
- আপনি যদি কাঁচা ছোলা ভিজিয়ে আদার সাথে খান তাহলে শরীরে আমিষ ও অ্যান্টিবায়োটিকের চাহিদা পূরণ হবে। যেখানে আমিষ মানুষের শরীরকে শক্তিশালী করে তোলে এবং অ্যান্টিবায়োটিক শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
- শ্বাসনালীতে জমে থাকা পুরনো কোন কাশি কিংবা কফ ভালো করার জন্য কাজ করে থাকে কাঁচা ছোলা।
প্রতিদিন কতটুকু কাঁচা ছোলা খাওয়া উচিত?
কাঁচা ছোলা যে স্বাস্থ্যের জন্য অনেক প্রয়োজনীয় এবং এতে পুষ্টি উপাদান ভরপুর পরিমাণে বিদ্যমান তা যেমন সত্য ঠিক তেমন এটি পরিমিত পরিমাণে না খেলে শরীরের জন্য বিভিন্ন দিক থেকে যে ক্ষতিকারক প্রমাণিত হতে পারে তাও সত্য। আপনি যদি বলেন একজন সুস্থ ব্যক্তি প্রতিদিন কতটুকু কাঁচা ছোলা খেতে পারবে তাহলে এর উত্তর হবে একদিন সুপ্ত ব্যক্তির দৈনিক খুব জোড় ২৫ থেকে ৩০ গ্রাম ছোলা খাওয়া উচিত। মাত্র এক কাপ ছোলায় থাকে ১০ থেকে ১৫ গ্রাম প্রোটিন, ৯ থেকে ১২ গ্রাম ভোজ্য আঁশ, ৩৪ থেকে ৪৫ গ্রাম কার্বোহাইড্রেইট।
কাঁচা ছোলা খেলে কি গ্যাস হয়
মূলত যাদের হজমজনিত সমস্যা রয়েছে অর্থাৎ কোন খাদ্য হজম করতে সমস্যা হয় তাদের ক্ষেত্রে ছোলা গ্যাসের সমস্যা তৈরি করতে পারে। সাধারণত ডাল, বুট, ছোলা, বিন,সয়াবিন ইত্যাদি গ্যাস উদ্রেককারী খাবার। যেহেতু ছোলাতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন সুগার ও ফাইবার রয়েছে যা হজম হতে অনেক দেরি হয় সেক্ষেত্রে এটি আপনার পেটে গ্যাসের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
আরও পড়ুনঃ ত্রিফলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
এর পাশাপাশি ছোলায় রাফিনোজ নামক এক ধরনের সুগার উপাদান রয়েছে যা পাকস্থলির ব্যাকটেরিয়া ফার্মেন্ট না করা পর্যন্ত তা হজম হয় না যার ফলে সৃষ্টি হয় গ্যাস্ট্রিকের মত সমস্যা। তাই যাদের আগে থেকে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভুগছেন তাদের ক্ষেত্রে ছোলা খাওয়া মোটেও উচিত হবে না।
সকালে খালি পেটে ছোলা খাওয়ার নিয়ম
মূলত ছোলা বিভিন্ন সময়ে আপনি খেতে পারেন এটি সিদ্ধ করে খাওয়া যায় আবার কাঁচা ছোলা পানিতে ভিজিয়ে রেখে ও খাওয়া যায় আবার অনেকে এটি সেদ্ধ করে বিভিন্ন মশলা দিয়ে মাখিয়ে মজা করেও খান। সবকিছু বিবেচনা করলে দেখা যায় সকালের খালি পেটে ছোলা খাওয়ার উপকারিতা অনেক বেশি। তবে এক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই সঠিক নিয়মটি জেনে নিতে হবে। প্রথমে আপনাকে তোলা সারারাত ভিজিয়ে রাখতে হবে পরিষ্কার পানিতে এবং সকালে উঠে তাই একটু নরম হয়ে গেলে খালি পেটে এক মুঠো খান।
আপনাকে অবশ্যই এর পরিমাণ মাথায় রাখতে হবে একজন সুস্থ মানুষের জন্য দৈনিক ২৫ থেকে ৩০ গ্রামের উর্ধ্বে ছোলা খাওয়া মোটেও ঠিক হবে না এবং অতিরিক্ত ছোলা খাওয়ার ফলে ডায়রিয়া এবং বদহজমের মতো রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আপনি চাইলে ছোলার সেদ্ধ করে কিংবা তরকারিতে রান্না করেও খেতে পারেন। প্রতিদিন যদি আপনি এই নিয়মে সকালে খালি পেটে ভেজানো ছোলা খেয়ে থাকেন তবে দেখবেন তা আপনার সামগ্রিক স্বাস্থ্যকে বিভিন্নভাবে উপকৃত করছে।
সিদ্ধ ছোলা খেলে কি হয়
রান্না করা ছোলা হতে সিদ্ধ করা ছিল অনেক বেশি উপকারী। যেহেতু অতিরিক্ত তেলে অনেকক্ষণ রান্নার ফলে চুলায় থাকা খাদ্য উপাদান সমূহ নষ্ট হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে সেদ্ধ ছোলা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। নিম্নে সেদ্ধ ছোলার কিছু উপকারিতা আলোচনা করা হলো।
- প্রোটিন এবং আয়রনের ভালো উৎসঃ নিরামিষীরা সাধারণত প্রোটিন নিয়ে চিন্তা থাকে সেক্ষেত্রে আপনি চাইলে ছোলা সেদ্ধ করে খেতে পারেন এতে করে আপনার শরীরে প্রোটিনের ঘাটতি দূর হবে এবং আপনি যদি রক্তস্বল্পতায় ভুগেন তাহলে আপনার দৈনিন্দন খাদ্যাভাসে ছোলা অবশ্যই যুক্ত করা উচিত। এটি আয়রন সমৃদ্ধ একটি খাবার যা শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে।
- হার্ট সুস্থ রাখেঃ ছোলাতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট রয়েছে যা আপনার রক্তনালীকে সুস্থ রাখবে এবং এর পাশাপাশি এতে বিদ্যমান খনিজ উপাদান সমূহ রক্তের জমাট বাঁধতেও বাধা প্রদান করবে।
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণঃ ছোলায় থাকা ফাইবার যেহেতু রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে সেক্ষেত্রে সিদ্ধ ছোলা আপনার শরীরকে ডায়াবেটিসের মতো ক্ষতিকারক রোগ থেকে সুরক্ষা প্রদান করবে।
- হজম শক্তির উন্নতি ঘটায়ঃ এটি হজম শক্তির উন্নতি ঘটাতে যথেষ্ট কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
- পেশী শক্তি বৃদ্ধিঃ ছোলায় প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন বিদ্যমান রয়েছে যার ফলে তা আমাদের শরীর শক্তি গঠনের পাশাপাশি পেশির শক্তি বৃদ্ধিতেও সহায়ক।
- ওজন কমাতে সহায়তা করেঃ যেহেতু ছোলাই কম পরিমাণে ক্যালোরি থাকে সেহেতু অবশ্যই এটি খাবার ফলে আপনার ওজন বৃদ্ধি পাবে না বরং এটি খাবার ফলে দীর্ঘক্ষণ ধরে পেট ভরে থাকে যার ফলে অতিরিক্ত খাবার গ্রহণের প্রয়োজন পড়ে না সুতরাং এটি ওজন কমাতে সহায়তা করে।
- ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করেঃ ছোলায় বিদ্যমান প্রোটিন এবং ফাইবার ক্ষুদা নিয়ন্ত্রণে রাখে।
- ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়ঃ ছোলা ক্যান্সারের জীবাণু দমন করতে সহায়ক। ছোলা আমাদের পেটে গিয়ে তৈরি করে 'বিউটারেট' নামক এক ধরনের ফ্যাটি অ্যাসিড। গবেষণা প্রমাণিত যে এই ফ্যাটি অ্যাসিড মানুষের শরীরে রোগক্রান্ত এবং মৃতপ্রায় কোষ গুলোকে দমন করে এবং এভাবেই কলোরেক্টাল ক্যান্সার দমনে সহায়ক হয় ছোলা।
- হাড় শক্ত করতে সহায়তা করেঃ ছোলায় থাকে ভোজ্য আঁশ ম্যাগনেসিয়াম ও ক্যালসিয়াম যা হাড়ের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে এবং তার শক্তিশালী করে তুলতে অনেক কার্যকর প্রমাণিত হয়।
ছোলার ক্ষতিকর দিক
অতিরিক্ত পরিমাণে ছোলা খেলে কিংবা কারো যদি পূর্ব থেকে এ খাবার খেলে সমস্যা দেখা যায় সে ক্ষেত্রে তার অবশ্যই এই খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। চলুন জেনে নেওয়া যাক অতিরিক্ত ছোলা খাওয়ার ফলে সৃষ্ট কিছু অপকারিতা সম্পর্কে।
- ছোলায় প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম বিদ্যমান থাকে তাই যারা কিডনিজনিত সমস্যা আক্রান্ত রয়েছেন তাদের জন্য ছোলা খাওয়া মোটেও উচিত হবে না।
- যে সকল মানুষের গ্যাস্ট্রিক জনিত সমস্যা রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে ছোলা খাওয়া ক্ষতিকারক হতে পারে। ছোলাতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন সুগার ও ফাইবার রয়েছে যা হজম করতে দেরি হয় এর ফলে সৃষ্ট হতে পারে গ্যাস্ট্রিক জনিত সমস্যা।
- যে সকল মানুষ গাঁটের ব্যথার যন্ত্রণায় কষ্ট পাচ্ছেন তাদের জন্য ছোলা খাওয়া মোটে উচিত হবে না। ছোলায় প্রচুর পরিমাণে পিউরিন বিদ্যমান থাকে যার রক্তে ইউরিক এসিডের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে পারে। আর রক্তে ইউরিক এসিডের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে গাঁটের ব্যথার মত সমস্যা দেখা যায়।
- বেশকিছু মানুষ থাকে যাদের ছোলা খেলে এলার্জি জনিত সমস্যা দেখা যায় তাদেরও এটি খাওয়া থেকে অবশ্য বিরত থাকা দরকার।
- ছোলায় স্যাপোনিন বিদ্যমান থাকে যা অন্ত্রের উপর নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করতে পারে।প্রক্রিয়াজাত ছোলা পণ্য যেমন টিন জাত বা প্যাকেটজাত খাবার এ অনেক বেশি পরিমাণে সোডিয়াম থাকতে পারে যার রক্তচাপ এবং কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থের জন্য নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে।
আমাদের শেষ কথা
উপরিক্ত নিবন্ধে আমরা ছোলার সব রকম উপকারিতা নিয়ে কথা বললাম এবং এর পাশাপাশি পরিস্থিতিবিশেষে ছোলার কিছু ক্ষতিকারক দিক সম্পর্কেও আলোচনা করলাম। আশা করি পাঠকরা যেমনটি ছোলার গুরুত্ব সম্পর্কে বুঝতে পেরে নিজের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে দৈনন্দিন খাদ্যাভাসে ছোলা যুক্ত করবেন ঠিক তেমনি ভাবেই পরিস্থিতি বিশেষে এর ক্ষতিকারক দিকগুলো সম্পর্কে সচেতন হয়ে তা থেকে নিজেকে বিরত রাখার চেষ্টা করবেন।
সর্বোপরি মনে রাখতে হবে কোন কিছুই পরিমিত পরিমাণে কিংবা নিয়ম অনুসারে খাওয়ায় শ্রেয় অন্যথায় এটি আপনার স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করতে পারে। একটি কথা বলাই বাহুল্য ময় মসলা দিয়ে রান্না করা ছোলার থেকে সেদ্ধ করা ছোলা কিংবা কাঁচা ছোলা খাওয়া অনেক বেশি শ্রেয়। বরং মসলা দিয়ে রান্না করা ছোলা খেতে মজা হলেও এতে স্বাস্থ্যের উপর কোন ধরনের ইতিবাচক প্রভাব পড়ে না। সুতরাং অবশ্যই সকলকে এই বিষয়টি মাথায় রেখে সতর্ক থাকতে হবে।ধন্যবাদ সকলকেই।
ইজি গ্রাব ওয়েব এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url