তীব্র মাথা ব্যথা কমানোর উপায়

তীব্র মাথাব্যথা কমানোর উপায় নিয়ে আজকের আমাদের এই আর্টিকেল এবং এর সাথে পাঠকরা এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে মাথা ব্যথার বিভিন্ন কারণ ও ঘরোয়া উপায়েও মাথা ব্যথা দূরীকরণের কার্যকরী উপায় সমূহ সম্পর্কে জানতে পারবেন।


তীব্র মাথা ব্যথার ফলে যে যন্ত্রণাদায়ক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় তা বলে প্রকাশ করা সম্ভব নয় শুধুমাত্র যে সকল মানুষদের এ সম্পর্ক অভিজ্ঞতা রয়েছে তারাই এই পীরা সম্পর্কে অবগত। চলুন জেনে নেওয়া যাক এই যন্ত্রণাদায়ক পরিস্থিতি হতে পরিত্রাণের উপায় সম্পর্কিত কার্যকরী তথ্য সমূহ।

ভূমিকা

সাধারণত মাথা ব্যথা কোন রোগ নয় এটি কেবল একটি উপসর্গ মাত্র। দৈনিন্দন জীবনযাপন, খাদ্যাভ্যাস, বদ অভ্যাস, এবং অনেক সময় বিভিন্ন শারীরিক পরিস্থিতির কারণে মাথাব্যথা হতে পারে। এটি একটি ভীষণ পীড়াদয়ক অনুভূতি যা খুব অল্প সময়ের ভিতরে একটি মানুষকে অস্থির করে তোলার জন্য যথেষ্ট বলা যেতে পারে সমস্ত শারীরিক অস্বস্তির মধ্যে মাথাব্যথা সবথেকে অভিজ্ঞ। 

এক সমীক্ষায় দেখা যায় একটি নির্দিষ্ট বছরে প্রায় অর্ধেক প্রাপ্তবয়স্কদের মাথাব্যথা থাকে। সামান্য কারণে যখন মাথাব্যথা হতে পারে ঠিক তেমনভাবেই বড় কোন রোগের জন্য মাথাব্যথা হয়ে থাকতে পারে সুতরাং যথাযথ কারণ নির্ণয় করে এর প্রতিকার কিংবা চিকিৎসা করানোর জন্য অত্যন্ত জরুরী।

মাথা ব্যথা কেন হয়

একজন মানুষের কার্যক্ষমতা ও সময় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার প্রধান কারণ গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো মাথা ব্যথা নামক এই উপসর্গ। দৈনন্দন জীবনে মাথা ব্যাথার ভুক্তভোগীরা পারিবারিক, সামাজিক,সহ পেশাগত জীবনে বিভিন্ন বাধার এবং ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে থাকে। চলুন জেনে নেওয়া যাক মাথাব্যথার কারণ সমূহঃ
মাথা ব্যথা প্রধানত দুই ধরনের হতে পারে যেমনঃ১)প্রাইমারিক হেডেক এবং ২)সেকেন্ডারি হেডেক।
প্রাইমারি হেডেক এর কিছু উল্লেখযোগ্য উদাহরণ নিম্নরূপ।
টেনশন জনিত মাথা ব্যথাঃ এখন পর্যন্ত সব থেকে সাধারণ ধরনের মাথাব্যথা হলো টেনশন জনিত মাথাব্যথা।সাধারণত মাথার মাংসপেশি সংকোচনের ফলে এ ধরনের মাথাব্যথা পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। সাধারণত এ ধরনের মাথাব্যথা নিয়মিত ঘটে না এবং এর ফলে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার প্রয়োজনও পড়ে না। টেনশন জনিত মাথা ব্যথা মানসিক চাপ,হতাশা,ক্লান্তি,বিষন্নতা ইত্যাদি হতে সৃষ্টি হয়।এ ধরনের মাথা ব্যথার লক্ষণসমূহ হলো-
  • পুরো মাথা জুড়ে ব্যথা অনুভূত হয় এবং ব্যথা হালকা থেকে মাঝারি রূপ নিতে পারে।
  • সাধারণত এ ধরনের মাথা ব্যথায় বমি ভাব অনুভূত হয় না।
  • পেশাগত বিভিন্ন চাপ, ব্যক্তিগত জীবনের হতাশা বিষন্নতা ইত্যাদির সাথে এ ধরনের মাথা ব্যথার সম্পর্ক রয়েছে।
অ্যাসপিরিন ও অ্যাসিটামিনোফেন এর মত হালকা ব্যাথা নাশক ঔষধ এই ধরনের মাথা ব্যথার চিকিৎসার জন্য যথেষ্ট।

ক্লাস্টার হেডেকঃ তুলনামূলকভাবে এ ধরনের মাথাব্যথা অনেক কম দেখা যায় তবে পুরুষদের মাঝে ক্লাস্টার হেডেক এর প্রকোপ বেশি। এ ধরনের মাথা ব্যথায় কম্পন কারী ব্যথা অনুভূত হয় এবং এর সাথে চোখ দিয়ে জল পড়ে।ক্লাস্টার হেডেক ক্ষণস্থায়ী হয়ে থাকেসাধারণত ২ ঘন্টার বেশি এটি স্থায়ী হয় না কিন্তু এই মাথাব্যথা বারবার হয়। চোখের চারপাশে এবং পিছনে ব্যথা অনুভূত হয়ে থাকে এবং ব্যথা অনেক তীব্র হয় এর সাথে সাথে চোখ লাল হওয়ার মত উপসর্গ দেখা দিতে পারে।

মাইগ্রেনঃ মাইগ্রেন একটি বিরল ব্যাধি যা অত্যন্ত বেদনাদায়ক হয়ে থাকে। মাইগ্রেনে ভুক্তভোগী ব্যক্তি শুধু এর পীরা সম্পর্কে অবগত।মাইগ্রেটের ব্যথা সাধারণত মাসে একবার দুইবার ঘটতে পারে কিংবা পুরো বছর জুড়ে এক থেকে দুই বার এর প্রকোপ দেখা দিতে পারে এমনকি কমবেশি প্রতিদিনই মাইগ্রেন দরজায় নাড়া দিতে পারে।খাদ্যাভ্যাস, কোমল পানীয় পান, অ্যালকোহল যুক্ত পানীয় পান, হরমনের পরিবর্তন,বিভিন্ন ধরনের মানসিক চাপ এর ফলে মাইগ্রেন দেখা যায়।

মাইগ্রেনের প্রকোপ দেখা দিলে মাথার যেকোনো একপাশে কিংবা একপাশে সাথে সাথে অন্য পাশে ব্যথা হতে পারে। ব্যথা অত্যন্ত তীব্র হয় এবং এর ফলস্বরূপ কোন কাজে মনোনিবেশ করা সম্ভব হয় না তাছাড়াও মাইগ্রেনের ব্যথা অনুভূত হওয়ার সাথে সাথে বমি বমি ভাব ও দেখা যায়। আলো বা শব্দের সাথে ব্যথার তীব্রতা বাড়তে থাকে। মাইগ্রেনের ভুক্তভোগী রোগী ব্যথা শুরু হওয়ার পূর্বে চোখের সামনে আঁকাবাঁকা লাইন এবং আলোর নাচানাচি দেখে বুঝতে পারে মাইগ্রেনের ব্যাথা শুরু হতে চলেছে।

সেকেন্ডারি হেডেকঃ শারীরিক বা মাথার বিভিন্ন রোগের কারণে যখন মাথা ব্যথা হয়ে থাকে তখন তাকে সেকেন্ডারি হেডেক বলা যেতে পারে।যেমনঃ মস্তিষ্কের টিউমার,রক্তক্ষরণ,ব্রেইন স্ট্রোক,মাথার আঘাতজনিত কারণ,মস্তিষ্কের আবরণীপ্রদাহ(ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়ার বা টিউমারফুলার, মেনিনজাইটিস) ইত্যাদি।সেকেন্ডারি হেডেক ভুক্তভোগী রোগীদের ক্ষেত্রে বেশ কিছু লক্ষণ কিংবা উপসর্গ লক্ষ্য করা যায় যেমন তাদের দৃষ্টি শক্তি হ্রাশ পেতে পারে,অতিরিক্ত বমি ভাব কিংবা বমি হতে পারে এবং এর সাথে হাত পা কিংবা মুখ অবশ হয়ে যেতে পারে।

তীব্র মাথা ব্যথা কমানোর উপায়

  • তীব্র মাথা ব্যাথার তাৎক্ষণিক চিকিৎসার জন্য কিংবা এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য ব্যথা নাশক ঔষধ খাওয়া যেতে পারে। যদিও ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবন করা উচিত নয় তবুও হালকা মাথা ব্যথার ক্ষেত্রে প্যারাসিটামল সেবন করা যেতে পারে। তবে খেয়াল রাখতে হবে অতিরিক্ত ওষুধ সেবনের ফলেও মাথাব্যথা হতে পারে যাকে বলা হয় মেডিসিন ওভার ইউজ হেডেক।
  • অতিরিক্ত আলোর কারণে অনেক সময় মাথা ব্যথা দেখা দিতে পারে, তাই মাথা ব্যথা হলে ঘরের আলো কমিয়ে দিয়ে কিংবা ঘর অন্ধকার করে কিছুক্ষণ শুয়ে থাকলে মাথাব্যথা অনেকাংশে কমে আসতে পারে।
  • অনেক সময় ক্লান্তির কারণে মাথাব্যথা হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে এই ধরনের প্রাইমারি হেডেক হতে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য রোগের দুই পাশে ও ঘাড়ের কাছে যদি কিছুক্ষণের জন্য আঙ্গুলের ডগা দিয়ে ম্যসাজ করা যায় তাহলে অনেকটাই আরাম পাওয়া সম্ভব।
  • মাথা ব্যাথা হলে নিজেকে যতটা হাইড্রেট রাখা সম্ভব ততটা রাখতে হবে মাথা ব্যাথা হলেই কুসুম গরম জল পান করা অনেকটা উপকারী প্রমাণিত হতে পারে।এছাড়াও ডাবের জল, জুস, স্যুপ এসব এসব পানকরা মাথা ব্যাথা নিরাময়ে কার্যকরী। দৈনিক আট গ্লাস করে জল খাওয়া যেমন আপনাকে সুস্থ রাখবে ঠিক তেমনভাবেই মাথাব্যথার মত বেদনাদায়ক উপসর্গ হতেও আপনাকে দূরে রাখবে
  • মাথায় ঠান্ডা পানি ব্যবহার করলে, বরফ বা ভেজা কাপড় জড়ালেও মাথা ব্যথা অনেকাংশে দূর হয়।
  • হিট থেরাপি মাথাব্যথা নিরাময়ের ক্ষেত্রে উপযোগী হতে পারে একটি পরিষ্কার কাপড় গরম পানিতে ভিজিয়ে তা চিপে নিয়ে চোখের উপরে ধরে রাখতে হবে।হালকা গরম পানিতে গোসল করলেও এটি উপকারী প্রমাণিত হতে পারে।
  • মাথা বা কপালের সামনে অংশে ঠান্ডা কাপড় ভিজিয়ে চেপে রাখলে তিনবার ঠান্ডাজাতীয় কিছু চেপে রাখলেও অনেকটা আরাম পাওয়া সম্ভব।
  • আদা মাথা ব্যথা হতে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য যথেষ্ট উপযোগী। যেহেতু আদা একটি প্রদাহ নাশক মশলা জাতীয় খাদ্য সেক্ষেত্রে মাথা ব্যথা হওয়ার সময় আদা চিবুলে অথবা আদা চা পান করলে এটি অনেক কার্যকরী ফল প্রদান করে।

ঘরোয়া উপায়ে মাথা ব্যথা দূরীকরণের কার্যকরী উপায়

কিছু ঘরোয়া উপায় অবলম্বনের মাধ্যমে ও মাথাব্যথা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব।চলুন জেনে নেওয়া যাক সে সকল উপায় গুলো।
  • লবঙ্গ মাথাব্যথা নামক যন্ত্রণাদায়ক উপসর্গ হতে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য সহযোগী হতে পারে। লবঙ্গ গরম করে নেওয়ার পর একটু রুমালে করে এর ঘ্রাণ কিছু সময় অব্দি নিলেই অনেকটা আরাম পাওয়া যায়।
  • লবণযুক্ত আপেল খেলেও মাথাব্যথা দ্রুত ছাড়তে পারে। এক টুকরো আপেলের সাথে একটু লবণ ছিটিয়ে তা খেলে মাথা ব্যথার বিপরীতে এটি কার্যকর হবে।
  • আদা চিবানো কিংবা আদা দিয়ে গরম চা করে পান করাও মাথা ব্যথা নিরাময়ে যথেষ্ট কার্যকর।
  • শরীরকে হাইড্রেট রাখা সর্বোত্তম কাজ হবে মাথা ব্যথা নিরাময় করতে চাইলে। যত বেশি পরিমাণ পানি পান করবেন ততটাই এটি আপনাকে সুস্থ রাখার পাশাপাশি ব্যথা হতেও মুক্তি দান করবে।

মাথা ব্যথা কমানোর ১০টি ঔষধের নাম

চলুন জেনে নেওয়া যাক মাথা ব্যথা কমানোর দশটি শীর্ষক ওষুধের নামঃ
  • টাফনিল (Tufnil Tablet 200 mg)
  • টলিফ (Tolfi Tablet 200 mg)
  • মিনোপা (Minopa Tablet 200 mg)
  • মিগ্রাটল (Migratol Tablet 200 mg)
  • লজরিন (Lograin Tablet 200 mg)
  • মিগরেক্স (Migrex Tablet 200 mg)
  • আরিন (Arain 200 mg)
  • নামিটোল (Namitol Tablet 200 mg)
  • এনিলিক (Anilic 200 mg)
  • টলমিক (Tolmic 200 mg)

আমাদের শেষ কথা

মাথাব্যথা যেহেতু অত্যন্ত বেদনা দায়ক একটি উপসর্গ সুতরাং কোন ধরনের মাথাব্যথা লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত এটি নিরাময়ের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। উপরিক্ত আলোচিত উপায় ব্যতীত সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হলো ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা এবং প্রয়োজন হলে অভিজ্ঞ ডাক্তার হতে চিকিৎসা নেওয়া। অন্যান্য রোগ কিংবা উপসর্গের মতোই মাথাব্যথা হতে নিজের সুস্থ শরীরকে দূরে রাখতে সতর্কতার কোন বিকল্প নেই। কোনরকম দুশ্চিন্তা, হতাশা, অতিরিক্ত চাপ ইত্যাদি হতে যতটা সম্ভব নিজেকে রক্ষা করা এর অন্যতম ঔষধ।



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ইজি গ্রাব ওয়েব এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url