ত্রিফলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

ত্রিফলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে আজকে আমরা জানতে চলেছি। ত্রিফলা আয়ুর্বেদ স্বাস্থ্য অনুযায়ী হাজার রকম গুণসমৃদ্ধ একটি উপাদান। ত্রিফলার যে শুধু উপকারিতায় রয়েছে তা কিন্তু নয় এমনকি পরিস্থিতি অনুযায়ী এটি স্বাস্থ্যের জন্য বিপদজনক ও হতে পারে। এর পাশাপাশি ত্রিফলা যাদের খাওয়া যাবেনা ও খালি পেটে ত্রিফলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কেও জানবো।

                                    


তবে ত্রিফলার যে শুধু উপকারিতায় রয়েছে তা কিন্তু নয়,এমনকি পরিস্থিতি অনুযায়ী এটি স্বাস্থ্যের জন্য বিপদজনক ও হতে পারে। যার ফলে এর পুষ্টিগুণ সম্পর্কে যেমন অবগত থাকা জরুরি ঠিক তেমনি ভাবেই এর অপকারিতা সম্পর্কেও আমাদের সচেতন থাকা উচিত।

ভূমিকা

ত্রিফলা একটি অধিক প্রসিদ্ধ ও পরিচিত প্রাচীন আয়ুর্বেদিক প্রণালী যা মূলত আমলকি, বহেড়া ও হরিতকী নামের এই তিনটি ভিন্ন ভিন্ন ফলের মিশ্রণে তৈরি হয়ে থাকে। আমরা যদি ত্রিফলা শব্দের আক্ষরিক অনুবাদ করি তাহলে এটি দাঁড়াই (ত্রি=তিন ও ফলা=ফল) "তিনটি ফল"। এটি একটি ভেষজ প্রতিকার। ত্রিফলা অতিপ্রসিদ্ধ তার রাসায়নিক গুণাবলীর জন্য যার অর্থ এটি আমাদের শরীরের সুস্বাস্থ্য ও জীবনী শক্তি বজায় রাখতে এবং আমাদের শরীরকে বিভিন্ন রোগ হতে দূরে রাখতে সহায়তা করে।

ত্রিফলা আমাদের দেহের সামগ্রিক সুস্থতা বজায় রাখতে কাজ করে। এটি অন্তত সহজলভ্য ও বটে আপনি যদি কোন ধরনের মেজ কিংবা আয়ুর্বেদিক ওষুধ নিয়মমাফিক খেয়ে থাকেন তাহলে ত্রিফলা অবশ্যই আপনার নজরে পড়ে থাকবে। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসাস্বাস্থ্য অনুযায়ী ত্রিফলা অনেক বেশি পরিমাণে উপযোগী ও কার্যকরী এর ভেষজ গুনাগুন ও স্বাস্থ্যবর্ধক বৈশিষ্ট্যের জন্য।

ত্রিফলা খাওয়ার উপকারিতা

  • পেটের সমস্যা সমাধানেঃ পেটের সমস্যা গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো পেট ফেঁপে ওঠা, ফুলে যাওয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, ইত্যাদি। বৈজ্ঞানিকভাবে এটি প্রমাণিত যে খাদ্যাভাসে ত্রিফলা যুক্ত করলে এটি উপরিক্ত সমস্যা গুলোর অর্থাৎ পাচনতন্ত্রের সমস্যার সমাধান হিসেবে কাজ করে।
  • ডায়াবেটিসঃ শরীর যখন ইনসুলিন নামক হরমোন উৎপাদন করতে পারে না তখন শরীরে গ্লুকোজের পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃদ্ধি পায় এর কারণ স্বরূপ মানবদেহ ডায়াবেটিস নামে রোগে আক্রান্ত হয়।ত্রিফলা রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়া, গ্লুকোজ জমে যাওয়া থেকে রক্ষা করে। যার ফলে ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অনেকাংশে হ্রাস পাই।
  • জীবাণু বিরোধীঃ বৈজ্ঞানিক গবেষণায় স্বীকৃত যে ত্রিফলা বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসাই সংক্রমণ ঠেকাতে প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে।
  • ওজন কমায়ঃ ত্রিফলা বিপাক নিয়ন্ত্রণ, হজম শক্তির উন্নতি এবং শরীরে থাকা অতিরিক্ত চর্বি অপসারণ করতে সহায়তা করে এবং এর সাথে এটি পাচনতন্ত্র পরিষ্কার রাখতেও কার্যকর সুতরাং খাদ্য ভাসে ত্রিফলা অন্তর্ভুক্ত করলে এটি আপনার ওজন কমানোর যাত্রায় সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে।
  • কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সহায়তাঃ আমরা পূর্বে জেনেছি ত্রিফলা আমাদের দেহ হতে অতিরিক্ত চর্বি অপসারণ করতে সহায়তা করে এর ফল হিসেবে শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।
  • হজম ভালো রাখতে সহায়তাঃ ত্রিফলতার পাচক বৈশিষ্ট্যের জন্য আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রে বিখ্যাত। আমলকি, বহেড়া ও হরিতকী এই তিন ফলের মিশ্রণ অন্ত্রকে উদ্দীপিত রাখে যার ফলে অন্ত্রের মধ্য দিয়ে বর্জ্য সড়ানো সহজ হয়ে পড়ে। এবং এর ফলস্বরূপ হজম শক্তি অনেক ভালো থাকে। এছাড়া এটি স্বাস্থ্যকর পাচনতন্ত্র বজায় রাখতে অত্যন্ত কার্যকরী।
  • দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটাতে সহায়কঃ চোখের ছানি পড়া ও গ্লোকমা নিয়ন্ত্রণে ত্রিফলা অনেক বেশি কার্যকরী।এক গ্লাস পানিতে ১-২ চামচ ত্রিফলার গুঁড়ো মিশিয়ে সারা রাত রেখে দিন এবং তার পরের দিন সকালে পানি ছেঁকে ভালো করে চোখ পরিষ্কার করুন।এইভাবে নিয়মিত অভ্যাস গড়ে তুললে এবং চোখের পরিচর্যা করতে পারলে যেমন দৃষ্টি শক্তির উন্নতি ঘটবে ঠিক তেমনি ভাবেই চোখের বিভিন্ন সংক্রমণ হতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম থাকবে।
  • ক্যান্সার প্রতিরোধকঃ ত্রিফলাই থাকা আয়ুর্বেদিক বৈশিষ্ট্যসমূহের কারণে শরীরে এমন কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় যার ফলে শরীরে ক্যান্সার সেলগুলো জন্ম নেওয়ার কোন সুযোগ সৃষ্টি হয় না আর কোন কারণবশত যদি দেহে ক্যান্সারের কোষ গুলো জন্ম নাই সে ক্ষেত্রে ত্রিফলা তাদের বৃদ্ধি আটকাতে ঘাতক হিসেবে কাজ করে।
  • কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ের সহায়তাঃ এই আয়ুর্বেদিক মিশ্রণটি বাওয়েল মুভমেন্ট এর উন্নতি ঘটনার মাধ্যমে কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো জটিল রোগ এর সমাধানে সহায়তা করে থাকে। এর সাথে এটি কোলোন কে পরিষ্কার করার মধ্য দিয়ে নানা ধরনের রোগের আশঙ্কা কমাতেও সাহায্য করে ।

ত্রিফলা খাওয়ার নিয়ম

আয়ুর্বেদিক বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়ে থাকেন ত্রিফলা আলাদা আলাদা ভাবে তিনটি চূর্ণ করে ১ঃ২ঃ৪ অনুপাতে খেতে। এটি হাফ চা চামচ পাউডার জলের সাথে মিশিয়ে সকালে কিংবা রাতে খাওয়ার পরে খাওয়া যেতে পারে। তাদের পরামর্শ মোতাবেক বহেড়া চূর্ণটি খাওয়ার আগে, আমলকির চূর্ণটি খাওয়ার পরে এবং হরিতকীর চূর্ণটি খাওয়ার দুই থেকে তিন ঘন্টা পর খাওয়া ভালো। 

ভেষজ গুলো শোষণের জন্য এর জন্য খাবারের মধ্যে খালি পেটে ত্রিফলা খাওয়া উচিত। আয়ুর্বেদ স্বাস্থ্য অনুযায়ী কার্যকরী ফলাফল এর জন্য এই সকল মিশ্রণ ঘি এবং মধুর সাথে সেবন করা উত্তম। বাণিজ্যিকভাবে এটি ট্যাবলেট,ক্যাপসুল অথবা ত্রিফলা রস আকারেও উপলব্ধ। আর কেউ যদি স্বাস্থ্য বর্ধক মিশ্রণ বাসাতে তৈরি করতে চান তাহলে সে ক্ষেত্রে আয়ুর্বেদ ডাক্তারদের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরী।

ত্রিফলা ভেজানো জলপানের উপকারিতা

  • ত্রিফলা ভেজানো জল পান করলে দাঁতের হলদে ছাপ দূর হয়।
  • এটি মুখের দুর্গন্ধ দূর করতেও এই জল কার্যকারী।
  • ত্রিফলা জল নিয়ম মাফিক সেবন এর ফলে আমাদের শরীর এ মেটাবলিজম এর হার ঠিক থাকে এর ফলে শরীর এর অতিরিক্ত মেদ ঝড়তে সহয়তা হয় এবং ফলস্বরূপ ওজন নিয়ন্ত্রণ এ থাকে।
  • মনশরীরের রোগ ও প্রতিরোধ ক্ষমতা সুদৃঢ় করতেও সাহায্য করে ত্রিফলা ভেজানো রস কিংবা জল।

খালি পেটে ত্রিফলা খাওয়ার উপকারিতা

আয়ুর্বেদীও প্রসিদ্ধ ত্রিফলা যে তিনটি ফলের মিশ্রণ তৈরি হয় তার মানব শরীরের জন্য ভীষণ উপকারী হিসেবে প্রমাণিত প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠার পর খালি পেটের রস পান করলে একজন ব্যক্তি কম বেশি সকল ধরনের অসুখ থেকে নিজেকে দূরে রাখতে পারে। সুস্বাস্থ্য গঠন এবং স্বাস্থ্যবর্ধনের জন্য এর কোন বিকল্প নেই। 

প্রতিদিন সকালে এ ভেষজ পানীয় পান করলে রক্তের ভেতর যে টক্সিন নামক দূষিত পদার্থ থাকে তা বের হয়ে যায় এবং এর ফলে ত্বক হয় মসৃণ সুন্দর ও উজ্জ্বল।এছাড়াও এটি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক এবং এর সাথে ক্যান্সারের মতো ক্ষতিকারক এবং বিরল রোগের ও প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে।

ত্রিফলা এর অপকারিতা

এতক্ষণ পর্যন্ত আমরা ত্রিফলার উপকারিতা এবং পুষ্টিগুণাগুণ সম্পর্কে জানলাম। কিন্তু এর পাশাপাশি পরিস্থিতি অনুযায়ী ত্রিফলার কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কিংবা অপকারিতা রয়েছে চলুন এখন এসব বিষয়ে আলোকপাত করা যাক।
  • ত্রিফলা একটি প্রাকৃতিক ঔষধি। এটি সর্ব পরিমাণে সেবন করা স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী অপরপক্ষে অপরিমিত পরিমাণে সেবন করার ফলে ডায়রিয়া ও ডিসেন্ট্রি মতো রোগ হতে পারে সুতরাং এটি পরিমিত পরিমাণে সেবন করা ভালো।
  • যদি কোন ব্যক্তি নির্ধারিত কোন ওষুধ সেবন করে থাকে সেক্ষেত্রে দৈনন্দন খাদ্য বাসে ত্রিফলা যুক্ত করার পূর্বে অবশ্যই তার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।তাছাড়া এটি স্বাস্থ্যের বিরক্ত প্রভাব ঘটাতে পারে কিংবা অন্যান্য ওষুধের কাজে হস্তক্ষেপ করতে পারে।
  • অনেক সময় ত্রিফলার সেবনের ফলে ঘুমের ব্যাঘাত করতে পারে ও ঘটতে পারে তবে সেটা নির্ভর করে একজন ব্যক্তি কি পরিমান ত্রিফলা পাউডার সেবন করছে।
  • মৃগী রোগের ওষুধ সেবনকারী ব্যক্তিদের ত্রিফলা না খাওয়াই ভালো।
  • গর্ভবতী নারী কিংবা যে সকল মহিলা সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ান তাদের অবশ্যই ত্রিফলা খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত কারণ এটি যে তাদের জন্য নিরাপদ এর কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই।
  • ত্রিফলার সেবনের ফলে অনেক সময় গ্যাস্ট্রিক,পেট ব্যথা,ক্রাম্প সহ বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।

ত্রিফলা যাদের খাওয়া যাবেনা

  • একজন ডায়রিয়া রোগীর জন্য ত্রিফলা খাওয়া একদমই যাবে না। এর ফলে এটি উপকার নয় বরং সাতক্ষীর উপর বিরূপভাবে খেলবে।এই ওষুধটি যেহেতু প্রাকৃতিক রেচক তাই ডায়রিয়া হলে এটি খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। অনেক সময় লক্ষণগুলো হালকা থেকে গুরুতর পর্যন্ত হতে পারে।
  • একজন গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী নারীর ত্রিফলা খাওয়া একদম উচিত নয়। যদিও বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত নয় তবে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের মতে এটি খেলে রক্ত পাতলা হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে এমন কি গর্ভপাত পর্যন্ত ঘটতে পারে।
  • যে সকল ব্যক্তিদের জিন মিউটেশনের সমস্যা রয়েছে তাদের ত্রিফলা খাওয়া উচিত নয় আর সেবন করতে চাইলেও তার চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সেবন করা উচিত।

শেষ কথা

আজকের আমাদের আলোচ্য বিষয় ছিলো ত্রিফলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতাত্রিফলা একটি স্বাস্থ্যগুণ সমৃদ্ধ ওষুধ ভেষজ।আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা শাস্ত্র মতে এটি অত্যাধিক গুরুত্বপূর্ণ। তবে পরিস্থিতি অনুযায়ী যেহেতু অনেকের ক্ষেত্রে এটি ক্ষতিকারক হিসেবে বিবেচিত হয় সুতরাং এটি খাবার পূর্বে অবশ্যই উপরে উপরিক্ত লিখিত বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে। সচেতনতা সুস্বাস্থ্যে বজায় রাখার ক্ষেত্রে সব থেকে বেশি ভূমিকা রাখে। 

অবশ্যই একটি দৈনন্দন খাদ্যাভাসে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত কিন্তু তার পূর্বে পরিস্থিতি অনুযায়ী এর পার্শ্বপ্রতিকে এগুলো বিবেচনা করা উচিত বটে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ইজি গ্রাব ওয়েব এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url