চুল পড়ার কারণ ও চুল পড়া বন্ধ করার উপায়

চুল পড়ার কারণ ও চুল পড়ার বন্ধের উপায় নিয়ে আজকে আমাদের আর্টিকেল এর বিষয়বস্তু এবং এর সাথে আমরা নারীদের চুল পড়া বন্ধের উপায় সম্পর্কেও জানতে পারব মানবদেহে বাহ্যিক সৌন্দর্যের ভিতর অন্যতম হলো চুল আরে চুল নিয়ে শুধু মহিলারা নয় বরং পুরুষ মানুষেরাও অনেক উদ্বেগী।

                                      

চুলে যত্ন নিতে এবং চুল পড়া বন্ধে সহযোগিতার আশায় আজকের আমাদের আর্টিকেলের লক্ষ্য। তাই চলুন জেনে নেওয়া যাক এই সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য।

ভূমিকা

আমাদের শরীর এ বাহ্যিক সৌন্দর্য ধরে রাখার জন্য চুল এর গুরুত্ব আমরা সকলেই বুঝি।নিজেকে সবার সামনে উপস্থাপন করার জন্য,আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধির জন্য, ব্যক্তিগত জীবন সহ পেশাদারী জীবনে নিজেকে সুন্দর ভাবে বহন করার জন্য চুল অপরিহার্য। বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রে এটি সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

বর্তমান সময় এর কথা বিবেচনা করলে ১০ জন মানুষ এর ভিতরে ৬ জন মানুষই চুল পড়া সমস্যা নিয়ে ভুগছেন।এক সমীক্ষা মতে একজন মানুষ এর দৈনিক ৫০-১০০টি চুল উঠা স্বাভাবিক বিষয় তবে সেক্ষেত্রে যদি সেই জায়গা গুলো তে আবার নতুন চুল না গজায় তাহলে তখন তাকে আমরা চুল পড়া কিংবা (Hair Fall) হিসেবে সংজ্ঞায়িত করে থাকি।

চুল পড়ার কারণ সমূহ

  • আবহাওয়ার পরিবর্তনঃ আমাদের দেহ একটি একটি নির্দিষ্ট পরিবেশের সাথে অভ্যস্ত এবং যখন আমরা অন্য একটি পরিবেশে নতুন করে এ নিজেদের জীবযাত্রা শুরু করি তখন আমাদের শরীর এর সেই পরিবেশ এ ক্ষাপ খাওয়াতে সময় নেই। নতুন পরিবেশ এ অভ্যস্ত না হওয়ার ফলে বিভিন্ন পরিবর্তন গ্রহন করতে পারে না ফলে শুরু হয় চুল পড়া।আবার অনেক জায়গায় পানিতে ক্ষার এর পরিমাণ বেশি থাকার ফলেও চুল পড়ে যায়। যেমনঃচট্টগ্রাম শহরের লবণাক্ত পানি।
  • জেনেটিক্স এর কারণেঃ বংশগত কারণগুলি চুল পড়ার সবচেয়ে প্রচলিত কারণগুলির মধ্যে একটি। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় একটি বংশের পূর্ব প্রজন্ম ধারা হতে চুল পড়া কিংবা টাক পড়ার বৈশিষ্ট্য আছে সেক্ষেত্রে এই প্যাটার্নকে জেনেটিক্স এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করা যায়। এটি পুরুষদের (পুরুষ-প্যাটার্ন টাক) এবং মহিলাদের (মহিলা-প্যাটার্ন টাক) উভয়কেই প্রভাবিত করতে পারে।
  • মানসিক চাপঃ অতিরিক্ত মানসিক চাপ কিংবা দুশ্চিন্তা চুল পড়ার অন্যতম কারণ।অতিরিক্ত চিন্তা করা,মানসিক অশান্তিতে ভোগা ইত্যাদিও অকালেই চুল পড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ।
  • পর্যাপ্ত পুষ্টির অভাবঃ আয়রন,ভিটামিন,প্রোটিন ইত্যাদির মতো প্রয়োজনীয় উপাদান চুলে স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং অকালেই চুল উঠে যাওয়ার জন্য দায়ী হতে পারে।বিশেষ করে ভিটামিন-ই এর অভাব এই ক্ষেত্রে বেশি প্রভাব ফেলে থাকে।
  • বিভিন্ন রোগের কারণেঃ টাইফয়েড, থাইরয়েড, অটোইমিউন রোগ, এবং কিছু সংক্রমণ,এবং চিকিৎসা শর্তের কারণেও চুল পড়ে যেতে পারে।যেমনটা আমরা ক্যান্সারের চিকিৎসা কেমোথেরাপির ক্ষেত্রে দেখতে পাই।
  • চিকিৎসা শর্তঃ বাত ব্যাথার ঔষুধ সেবন,বিষণ্নতা, হার্টের সমস্যা,উচ্চ রক্তচাপ এর সমস্যা, রেডিয়েশন থেরাপি চলাকালীন অবস্থা ও ক্যান্সারের চিকিৎসায় ব্যবহ্ত কেমোথেরাপির ঔষুধ সহ বেশ কিছু ঔষুধ চুল পড়ার কারণ হতে পারে।
  • চুলের বিভিন্ন স্টাইলঃ চুলের অংভং স্টাইল,চুল ঘন ঘন রঙ করানো,বান বা পনিটেল করা (যার জন্য চুলে অযথায় চাপ পড়),এবং চুল সোজা বা সাট করার মতো চুলের কঠোর চিকিৎসা যেখানে ব্যবহার করা হয় অত্যাধিক তাপমাত্রা এবং বিভিন্ন ক্যামিকাল যা চুলের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত প্রমাণিত হয়।

চুল পড়া বন্ধ করার উপায়

    • পেঁয়াজ এর রসঃ  চুল পড়া বন্ধের ক্ষেত্রে পেঁয়াজ এর রস অত্যন্ত কার্যকরী। শুধু চুল পড়া বন্ধের ক্ষেত্রেই নয় বরং নতুন চুল গজানোর ক্ষেত্রেও পেঁয়াজের রস অনেক উপকারী। পেঁয়াজের রসে রয়েছে অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট, যা কিনা চুলের গোড়ায় হাইড্রোজেন পার–অক্সাইডের মাত্রা অনেকাংশে কমায়। যার ফলে চুলের গোড়া মজবুত হয় এবং ফলস্বরূপ চুল পড়া কমে এবং চুল পাকার সম্ভাবনাও কমে যায়।
    • আমলকিঃ চুলের সুস্বাস্থ্য গঠনের ক্ষেত্রে আমলকি অত্যন্ত কার্যকরী। স্বাভাবিকের তুলনায় অতিরিক্ত চুল ঝরে পড়লে আমলিকর ব্যবহার সুনিশ্চিত ফলাফল প্রদান করবে এর পাশাপাশি চুলের সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে, খুশকি দূর করতে আমলকির তুলনা হয় না। আমলকিতে থাকা কোলাজেন নতুন কোষ তৈরিতে অত্যন্ত কার্যকরী।
    • ভিটামিন-ই ক্যাপসুলঃ চুল পড়া রুখতে ভিটামিন-ই ক্যাপসুল এর কোন তুলনা হয় না। নারিকেল তৈল কিংবা অন্য যে কোন ভালো মানের তৈল এর সাথে এই ক্যাপসুল ভেঙে সপ্তাহে দুইবার চুলে প্রয়োগ করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। ক্যাপসুলে থাকা তেল ব্যবহৃত তেল এর সাথে মিশিয়ে চুলের গোড়ায় কিংবা চুলের ত্বকে প্রয়োগ করে দুই থেকে তিন ঘন্টা সেভাবে রেখে দিতে হবে এবং পরে তার শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলতে হবে। শ্যাম্পু করার ক্ষেত্রে কুসুম গরম পানি ব্যবহার করা ভালো।
    • মেথিঃ সারারাত মেথি ভিজিয়ে রাখার পর সকালে তা ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে পেস্ট করে নিতে হবে এবং এর পর চুলের গোড়ায় প্রয়োগ করতে হবে। এটি দই কিংবা মধুর সাথে মিশ্রণ করে ব্যবহার করাও সম্ভব।
    • নারেকেল দুধ ও তৈলঃ নারিকেল এ ফ্যাট থাকে যা চুলের জন্য অনেক কার্যকরী ও উপকারী উপাদান। দৈনিন্দন এই মিশ্রণ ব্যবহারের ফলে চুল অনেক পুষ্টিকর হবে এবং চুল পড়া অনেকাংশে বন্ধ হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে বেশি জোরে ঘষা দেওয়া যাবে না বেশি জোরে ঘষা দিলে চুল পড়ার আশঙ্কা থাকে। নারিকেল কুঁড়ে বা বেটে গরম পানিতে ভিজিয়ে রেখে দুধ বের করে চুলের গোড়ায় আধা ঘন্টা লাগিয়ে রাখলেই এটি কার্যকর হবে।
    • অ্যালোভেরা জেলঃ অ্যালোভেরা জেল যে শুধুমাত্র ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে কাজে আসে তা নয় বরং চুলের সুস্বাস্থ্য রক্ষায় ও এটি অতি গুরুত্বপূর্ণ। কাঁটা চামচ ব্যবহারের মাধ্যমে এলোভেরা থেকে জেল বের করে নেওয়ার পর জেল হাতের তালুতে ঘুরিয়ে চুলের গোড়ায় ভালো ম্যাসাজ করে নিতে হবে। এর ফলে এর ফলে চুলের পিএইচ ভ্যালু বৃদ্ধি পায় এবং চুলের সুস্বাস্থ্য বজায় থাকে।
    • নিমপাতার নির্যাসঃ নিমপাতার ঔষুধি গুণাগুণ সম্পর্কে কম বেশি আমরা সকলেই অবগত। আর চুলের ক্ষেত্রেও বিষয়টি ব্যতিক্রম নয়। এক লিটার পানিতে ১৫-২০ টি নিমপাতা খুব ভালো করে ফুটিয়ে নেওয়ার পর মিশ্রণটা ঠাণ্ডা করে বোতলে ভরে রেখে দিতে হবে। সপ্তাহে একবার শ্যাম্পু করার পর চুল এই নিমের পানিতে ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে।
    • ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবারঃ চুলের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রোটিন, ভিটামিন-এ, ভিটামিন -বি, বিশেষ করে বায়োটিন,ও (ভিটামিন- সি, ডি ও ই) এবং বেশকিছু খনিজ যেমন আয়রন, জিঙ্ক নিয়মিত গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ডিমের কুসুম, কলিজা, বাদাম, বীজ, কলা, মিষ্টি আলু, মাশরুম, ব্রকলি ইত্যাদি এ সকল ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার। 

    কিশোর বয়সে অত্যাধিক চুল পড়ার কারণ সমূহ

    চুল পড়ার কারণ ও চুল পড়া বন্ধ করার উপায় সম্পর্কে জানা শেষ হলেও একটি নির্দিষ্ট বয়স পর চুল পড়া অনেকটা স্বাভাবিক হলেও কিশোর বয়সে কিংবা যৌবন এ চুল উঠতে থাকা কিংবা চুল পড়ে যাওয়া বেশ চিন্তার। আসুন জেনে নেই কিশোর বয়সে চুল উঠে যাওয়ার কারণ সমূহ যাতে পাঠেকরা এই বিষয়ে সচেতন হয়।
    • পিসিওসঃ পিসিওস এর এর পূর্ণরুপ হলো পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম। ডিম্বাশয় ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন হরমোন উৎপাদন করে থাকে এবং সেই সাথে সেইসঙ্গে পুরুষ হরমোন অ্যান্ড্রোজেনের একটি অংশ ও উৎপাদিত হয়ে থাকে হয় ডিম্বাশয় থেকে। পিসিওএস-এ আক্রান্ত হলে ডিম্বাশয় অতিরিক্ত পরিমাণে অ্যান্ড্রোজেন তৈরি করতে শুরু করে যার ফলস্বরূপ অতিরিক্ত হারে চুল পড়া শুরু হয়।
    • ছত্রাকের সংক্রমণঃ চুলের গোড়ায় কিংবা মাথার ত্বকে সংক্রমণের কারণেও অতিরিক্ত চুল পড়তে পারে।মাথা চুলকানো, মাথার টক লাল হয়ে যাওয়া,তোকে ছোট ছোট ঘা হওয়া, এবং সাদা সাদা ছত্রাকের দেখা ইত্যাদি ছত্রাকের সংক্রমণ এর লক্ষণ। যাকে আমরা আঞ্চলিক ভাষায় খুস্কী ও বলে থাকি। এর সংক্রমণের কারণে চুলের গোড়া অনেক পাতলা হয়ে যাই এবং চুল উঠতে থাকে।
    • চুলে রঙ করাঃ সাধারণত চুল রঙ করার ক্ষেত্রে রাসায়নিক পদার্থ এর ব্যবহার করা হয়ে থাকে যা অনেকাংশেই চুলের ক্ষতি সাধন করতে পারে বারবার করে চুলে রঙ করা বা ব্লিচ করা, চুল স্ট্রেট কিংবা করার জন্য চুলের ক্ষতি সাধন হয় । এর ফলে চুল ভেঙে যায় বা পড়ে যাওয়া শুরু হয়ে যায়। আয়রন বা গরম ব্লো-ড্রাইং থেকে অতিরিক্ত তাপ দেওয়ার ফলেও চুলের ক্ষতি হয়। হেয়ার স্ট্রেইটনার ও চুলের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে কারণ এটি ব্যবহারেও তাপ প্রয়োগ করা হয়। 
    • চুলের আটাসাঁটা স্টাইলঃ চুলের অংভং স্টাইল,চুল ঘন ঘন রঙ করানো,বান বা পনিটেল করা (যার জন্য চুলে অযথায় চাপ পড়),এবং চুল সোজা বা সাট করার মতো চুলের কঠোর চিকিৎসা যেখানে ব্যবহার করা হয় অত্যাধিক তাপমাত্রা এবং বিভিন্ন ক্যামিকাল যা চুলের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত প্রমাণিত হয়। তাছাড়া চুলকে খুব বেশি টানটান করে, এমন হেয়ারস্টাইল চুলে প্রয়োগ করা হলে করা হলে চুলের ফলিকল স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
    • সালফারযুক্ত শ্যাম্পুর ব্যবহারঃ অনেক শ্যাম্পুতে অনেক সময় সালফারযুক্ত রাসায়নিক ব্যবহার করা হয় অনেক শ্যাম্পুতে এর পরিমাণ বেশি থাকে আবার অনেক শ্যাম্পুতে কম । কিন্তু এই রাসায়নিকের কারণে মাথার ত্বক থেকে তৈল ধুয়ে যায়। এর ফলে চুল এর গোড়া শুকিয়ে যায় এবং এর সাথে চুলের জন্য প্রয়োজনীয় প্রোটিন ভেঙে যায়, চুলে বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায় এবং চুল ভেঙে পড়া শুরু হয়ে যায়।
    • হরমোন পরিবর্তনঃ এই বয়সে কিশোরদের অনেক ধরনের শারীরিক পরিবর্তন দেখা দেয় যা মূলত শরীরে হরমোন পরিবর্তনের কারণেই সংগঠিত হয়ে থাকে। আর এই পরিবর্তন এর ফলে সব থেকে বেশি চুল ঝরে। হরমোন পরিবর্তনের কারণে শারীরিক ও মানসিক অনেক ধরনের পার্থক্য দেখা যায়। হরমোনের কারণে মাথায় চুল কমে যাওয়া অনেকটা প্রাকৃতিকও বটে।

    কিশোর বয়সে চুল পড়ে যাওয়ার সমাধান

    একটি নির্দিষ্ট বয়স পর চুল পড়া স্বাভাবিক হলেও কৈশোরে চুল ঝড়ে যাওয়া কিংবা পড়ে যাওয়া কিছুটা চিন্তার বিষয়। সাধারণত এই বয়সে সবাই চাই নিজেকে আরও আকর্ষণীয় ও সুন্দর দেখাতে তার মাঝে এমন বিষয় বস্তু কিশোর কিশোরীদের উদ্বেগ এর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই আসুন জেনে নেওয়া যাক এই সমস্যা সমাধান এর কিছু কার্যকরী উপায়ঃ

    • শ্যাম্পু ও হেয়ার জেল ব্যবহারের সতর্কতাঃ যেহেতু শ্যাম্পু ও হেয়ারজেল তৈরিতে রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করা হয় সুতরাং এগুলো দীর্ঘ সময় মাথায় থাকার কারণে এগুলো মাথার ত্বক এ থাকা ছিদ্রগুলো আটকে দিতে পারে যার ফলে মাথার ত্বকে অক্সিজেন সরবরাহ বাঁধাগ্রস্ত হতে পারে।তাছাড়াও চুলে হেয়ারজেল ব্যবহারের ফলে স্ক্যাল্পে চুলকানি বা জ্বালাভাব দেখা দিতে পারে। এতে ব্যবহৃত ক্ষতিকারক কেমিক্যাল এর কারণে চুলের রঙেও বিরুপ প্রভাব পড়তে পারে।
    • উচ্চ তাপে হেয়ার-ড্রায়ার এর ব্যবহারঃ অতিরিক্ত তাপমাত্রা চুলের জন্য বরবারই ক্ষতিকর। বিশেষজ্ঞ দের মতানুসারে এই যন্ত্রের অতিরিক্ত ব্যবহার এর ফলে চুলের গোড়া নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।হেয়ার ড্রায়ার এ চুল শুকানোর অভ্যাস থাকলে তা ত্যাগ করে প্রাকৃতিক রোদ,বাতাস কিংবা ফ্যানের বাতাসে চুল শুকানোর অভ্যাস গড়ে তোলা ভালো।তবে বর্তমানে বাজারে এমন সকল হেয়ার ড্রায়ার ও পাওয়া যাচ্ছে যেগুলে থেকে ঠান্ডা বাতাস বের হয়।
    • টাইট হেয়ারস্টাইল এড়িয়ে চলাঃ চুলের টাইট স্টাইল ,যেমন বান বা পনিটেল করা (যার জন্য চুলে অযথায় চাপ পড়),এবং চুল সোজা বা সাট করার মতো চুলের কঠোর চিকিৎসা যেখানে ব্যবহার করা হয় অত্যাধিক তাপমাত্রা এবং বিভিন্ন ক্যামিকাল যা চুলের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত প্রমাণিত হয়। তাছাড়া চুলকে খুব বেশি টানটান করে, এমন হেয়ারস্টাইল চুলে প্রয়োগ করা হলে করা হলে চুলের ফলিকল স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
    • খাদ্যতালিকার পরিবর্তনঃ অকালেই চুলের ঝড়ে যাওয়া এড়িয়ে যাওয়ার জন্য এবং চুলের স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য খাদ্য তালিকায় যুক্ত করতে হবে সুষম ও পুষ্টি সমৃদ্ধ খাদ্য সমূহ। চুলের জন্য পর্যাপ্ত প্রোটিন, ভিটামিন-এ,ভিটামিন- বি, বিশেষ করে বায়োটিন, সি, ডি ও ই) এবং বেশকিছু খনিজ যেমন আয়রন ও জিঙ্ক নিয়মিত গ্রহণ করা কতিপয় জরুরি।অনেক কিশোর কিশোরীই ওজন বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার খায় না।এর ফলস্বরূপ শরীরে সুষম খাদ্যের ঘাটতি দেখা যায়।
    • শরীর চর্চা করাঃ হরমোন এর ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য শরীর চর্চা করা অনেক উপকারী। যেমনটি হরমোন এর ভারসাম্য ও বজায় থাকবে ঠিক তেমনি ভাবে স্ট্রেস ও কমবে।রোজ কমপক্ষে ৩০ মিনিট হাঁটাহাঁটি করা, সাইকেল চালানো কিংবা সাঁতার কাটা এ এক্ষেত্রে উপযোগী হতে পারে।
    • পেঁয়াজের রসের ব্যবহারঃ যেকোন বয়সের মানুষ এর জন্য ঘরোয়া উপায়ে চুল পড়া ঠেকানোর জন্য পেঁয়াজ সবসময় এ কার্যকারী উপরকণ।পেঁয়াজ ব্লেন্ড করে এর রস বার করে রাতে চুলের গোড়ায় ব্যবহার করলে এক সপ্তাহের ভিতরে হাতে নাতে আশানুরূপ ফল পাওয়া সম্ভব।

    নারীদের চুল পড়ার কারণ

    মাথা থেকে চুল পড়ে যাওয়া স্বাভাবিক বিষয় যতক্ষণ না এর পরিমাণ কম থাকে। তবে এর পরিমাণ যখন বাড়তে থাকে,তখন তা সমস্যা হিসেবে ফুটে উঠে।গবেষণায় দেখা গেছে, জীবদ্দশায় নারীদের তুলনায় পুরুষেরা এ সমস্যায় বেশি ভোগেন তাদের মাথা থেকে চুল পড়ে যাওয়ার সমস্যা বেশি দেখা যায়। তবে নারীদের চুল পড়া নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন হতে দেখা যায়। চলুন জেনে নেওয়া যাক নারীদের অতিরিক্ত চুল পড়ার কারণসমূহঃ

    • পুষ্টিহীনতাঃ চুল যেমন নারীদের কাছে উদ্বেগ এর একটি বিষয় ঠিক তেমনি ভাবেই শরীর এর ওজন ও তাদেরকে অনেক বেশি ভাবাই। আর এই শরীর এর ওজন নিয়ে উদ্বিগ্ন হতে গিয়েই তারা ডায়েট শুরু করে দেয়।এর ফলে দেখা যায় তাদের শরীর এর উপকারী ভিটমানি,প্রোটিন আমিষ,পটাশিয়াম ইত্যাদি হতে তারা বঞ্চিত থাকছেন। আমিষ,খনিজ ভিটামিন এর অভাব দেখা দেওয়ার ফলে সংগঠিত হচ্ছে চুল পড়ার মত সমস্যা। 
    • জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল এর সেবনঃকিছু জন্মনিয়ন্ত্রণ পিলে প্রোজেস্টেরন হরমোন থাকে। এটা নারীদের চুল পড়ার অন্যতম কারণ হতে পারে। তাই জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল খাওয়ার পূর্বে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া জানা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরী এ ছাড়া গর্ভধারণের সময় একজন নারীর শরীরে নানান হরমোনের পরিবর্তন ঘটে। এর প্রভাবে চুল পড়ে যেতে পারে।
    • শারীরিক অসুস্থতাওমানসিক চাপঃ শারীরিক অসুস্থতা, অপারেশন হওয়া ও মানসিক চাপ চুল পড়ার অন্যতম কারণ। এসব ক্ষেত্রে দেখা যায়, চুল ঝরে গেলেও আর নতুন চুল গজায় না এবং চুল বাড়ে না। শরীর সারাতে ব্যস্ত থাকে সব শক্তি এবং অনাদরে পড়ে যায় চুল। এসব ক্ষেত্রে চুল পড়তে থাকে তিন মাস, আবার চুল গজাতে সময় লাগে তিন মাস। অর্থাৎ ছয় মাস সময় লাগে চুল স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে। রক্তস্বল্পতা ও থাইরয়েডের সমস্যায়ও চুল পড়ে।
    • অনান্য কারণঃ উপরিউক্ত আলোচিত কারণ গুলো ছাড়াও শারীরিক অসুস্থতা। অতি মাত্রায় ভিটামিন ‘এ’ গ্রহণ করা, উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ সেবন করা রক্তস্বল্পতা, ওজন কমে যাওয়া, হজমের সমস্যা,যেকোনো অস্ত্রোপাচারের পর রক্তস্বল্পতা, মানসিক চাপ, অতিরিক্ত কর্মব্যস্ততা, পরিবারের,থাইরয়েড হরমোনজনিত সমস্য,ডায়াবেটিস পলিসিসটিক ওভারি,মূত্রনালির প্রদাহ।ইত্যাদির কারণে নারীদের চুল পড়তে পারে।

    নারীদের চুল পড়া বন্ধের উপায়

    • জবা ফুলঃ জবা ফুল চুলের সমস্যা, খুশকি, শুষ্কতা, থেকে চুলকে রক্ষা করে। চুলকে ঘন এবং শক্তিশালী করে তুলতে জবা ফুল খুবই উপযোগী।৭টির মতো জবা ফুল নিয়ে একই পরিমাণে জবা গাছের পাতা ও আধ কাপ নারকেল তেলের সঙ্গে মিশিয়ে ফুটিয়ে এবং তেল ঠান্ডা হওয়ার পর সেই তেল স্ক্যাল্পে লাগিয়ে নিন এবং চুলেও ভালো ভাবে ম্যাসাজ করতে হবে।১ ঘণ্টা ৩০ মিনিএ রাখার সালফেট ফ্রি হালকা শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে নিলেই কাঙ্খিত ফলাফল পাওয়া যাবে।
    • নিম পাতা ও নারিকেল তেলঃ ১০-১২টা নিম পাতা নেওয়ার পর সেইগুলো ভালে ভাবে বেটে নিতে হবে এবং পাতা থেকে বের করে নিতে হবে নির্যাস।নির্যাস একটি অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান হিসেবে স্ক্যাল্পে কাজ করবে। নিমপাতার এই মিশ্রণের সঙ্গে পর্যাপ্ত পরিমাণ অলিভ অয়েল, আমন্ড অয়েল বা নারকেল তেল মিশিয়ে নিন। সেটি সামান্য গরম করে নিয়ে স্ক্যাল্পে মাসাজ করেন।এটি আপনাকে আসানুরূপ ফল দিবে।
    • ই-ক্যাপ এর ব্যবহারঃ নারিকেল তৈল কিংবা অন্য যে কোন ভালো মানের তৈল এর সাথে এই ক্যাপসুল ভেঙে সপ্তাহে দুইবার চুলে প্রয়োগ করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। ক্যাপসুলে থাকা তেল ব্যবহৃত তেল এর সাথে মিশিয়ে চুলের গোড়ায় কিংবা চুলের ত্বকে প্রয়োগ করে দুই থেকে তিন ঘন্টা সেভাবে রেখে দিতে হবে এবং পরে তার শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলতে হবে।
    • ডিমের কুসুম ,অলিভ ওয়েল ও লেবুর রসের মিশ্রণঃ ডিমের কুসুম, অলিভ ওয়েল ও লেবুর রসের মিশ্রণ চুলের জন্য হতে পারে অনেক বেশি কার্যকরী।এই মিশ্রণটি চুলের গোড়ায় এক ঘন্টা লাগিয়ে রাখার পর তা শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এটি চুল পড়া বন্ধ করবে, নতুন চুল গজাতে সাহায্য করবে, এবং চুলকে করে তুলবে মজবুত।
    • পেঁয়াজের রসঃ পেঁয়াজের রস নারীদের চুলের সুগঠনের ক্ষেত্রেও অনেক উপযোগী একটি উপাদান।চুলের গোড়ায় কমপক্ষে ১৫ -২০ মিনিট লাগিয়ে রাখার পর গরম কুসুম পানি ব্যবহার করে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।এতে করে চুল হবে ঘন এবং লম্বা।

    খুশকি দূর করার উপায়সমূহ

    চুলের মধ্যে দেখা দেওয়া সমস্যাগুলোর মধ্যে খুশকি অন্যতম। এটি কোন সাধারণ সমস্যার মত মনে হলেও ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।বিশেষ করে শীতের সময়ে এর প্রভাব বেশি দেখা যায়।খুশকি বা ছত্রাক চুলে বাসা বাঁধলে চুলের পাতলা হয়ে যাওয়া,চুলে রুক্ষতা, অতিরিক্ত চুল পড়ে যাওয়া (যেহেতু চুল ও এর গোড়া পাতলা হয়ে যায়) এবং এর সাথে মাথায় বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ দেখা যায়।নিম্নে খুশকি দূর করার কিছু কার্যকারী উপায় নিয়ে আলোচনা করা হলোঃ

    • মেথির ব্যবহারঃ চুল পড়ার সমাধান হিসেবে কিংবা খুশকি দূর করার জন্য অত্যন্ত কার্যকরী মেথি। সারারাত মেথি ভিজিয়ে রেখে পরের দিন তা ছেঁকে বেটে কিংবা ব্লেন্ড করে মাথায় ব্যবহার করতে হবে। ১ ঘন্টা চুলে প্রয়োগ করলে এবং পড়ে তা ভালো ভাবে ধুয়ে ফেললে খুশকি নিঃসরন হয় এবং চুল পড়া কমে।
    • সরিষার খৈলঃ সরিষার খৈল এর সাথে পরিমাণ মত ব্যবহৃত তৈল মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরী করে নিতে হবে যা তুলনামূলক বেশি ঘন হবে না আবার বেশি পাতলা ও না। মিশ্রণ চুলে লাগিয়ে ১-২ ঘন্টা অপেক্ষা করতে হবে তা শুকিয়ে যাওয়া অব্দি এবং এর পর পানি দিয়ে ভালো ভাবে তা ধুয়ে ফেলতে হবে।সপ্তাহে ২-৩ বার এই প্রক্রিয়া অবলম্বন করে দেখা যাবে কিছু দিন এর মাথায় চুলের খুশকি জনিত সমস্যা দূর হয়ে গেছে এবং চুল তুলনামূলক সুন্দর ও স্বাস্থ্যকর হয়েছে।
    • নিম পাতা ও টক দইঃ টক দই খুশকির সমস্যায় বেশ কার্যকারী।মাথায় টক দই ভালো ভাবে ম্যাসাজ করে মিনিট ১০ রেখে ভালো ভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে।এর ফলে খুশকি দূর হওয়ার পাশাপাশি চুল হবে ঝলমলে। এক্ষেত্রে আরও ভালো ফল পেতে নিম পাতা বাটা ও টক দই এর মিশ্রণ।
    • পেঁয়াজ ও আদার রসঃ চুলের যত্নে পেঁয়াজ কতটা কার্যকরী তা আমরা আগে জেনেছি এবং এর সাথে আদার রস ও যথেষ্ট উপকারী হিসেবে প্রমাণিত।চুল ঝকঝকে ও পরিষ্কার চুল করতে এই দুইটি উপাদান বেশ সাহায্য করে।পেঁয়াজ ও আদা ব্লেড করে তার রস সংগ্রহ করে তুলা দিয়ে মাথার স্ক্যাল্প এ লাগিয়ে দিতে হবে হবে কিছুক্ষন অপেক্ষা করার পর তা ধুয়ে ফেলতে হবে যা খুশকি নিরাময় করবে এবং মাথাকে রাখবে পরিষ্কার।
    • অ্যাপেল সিডের ভিনেগারঃ ছত্রাক এর বিরুদ্ধে বেশ কার্যকরী অ্যাপেল সিডির ভিনেগার। এর ভিতর থাকা অ্যান্টি ফাংগাল মাথার ত্বক এ সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে এবং আপেল এ থাকা এসিড মাথায় নতুন করে খুশকি তৈরীতে বাধা প্রদান করে থাকে।
    • নারিকেল তৈলঃ নারিকেল তেল গরম করে কিছুক্ষন এর জন্য রেখে দিতে হবে তা মোটেও গরম অবস্থায় ব্যবহার করা যাবে না এতে বিপরীত হবে।হালকা গরম অবস্থায় স্ক্যাল্প এ ম্যাসাজ করতে হবে এবং পরে পুরো চুলেই তেল লাগিয়ে দিতে হবে। ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘন্টা পর তা ভালো ভাবে ধুয়ে নিলেই চুল হবে সুন্দর এবং কিছু দিনের মাথায় খুশকি মুক্ত। নারিকেল তেল যেমন উপকারী ঠিক তেমনি ভাবেই জোজোবা অয়েল ও অনেক উপকারী এবং এদের মিশ্রণ চুলে নিয়মিত ব্যবহার করলে খুশকি দূর হবে সহজেই।নারিকেল তেল এর সাথে লেবু ও যথেষ্ট কার্যকারী।এক টেবিল চামচ নারিকেল তৈল এর সাথে এক চা চামচ লেবুর রস মিশিয়ে চুলের গড়ায় ব্যবহার করলেই কাঙ্খিত ফল পাওয়া সম্ভব।

    শেষ কথা

    চুল যেহেতু আমাদের সকলের নিকট খুব প্রিয় এবং গুরুত্বপূর্ণ একটি দৈহিক অংশ অতএব অবশ্যই এর সুস্বাস্থ্য ধরে রাখার জন্য যথার্থ চেষ্টা করতে হবে।বর্তমান সময়ের আবহাওয়া ও দূষণীয় বৈশ্বিক পরিবেশ এর কথা বিবেচনা করলে চুলের বিশেষ যত্ন নেওয়া এখন কতিপয় জরুরি হয়ে উঠেছে। আশা করা যায় আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হবে এবং আপনারা এই বিষয়ে কার্যকারী দিকনির্দেশনা পেতে পারবেন।ধন্যবাদ।

    এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

    পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
    এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
    মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

    ইজি গ্রাব ওয়েব এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

    comment url